লিড নিউজ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি শুরু
দেশে করোনা সংক্রমণ কমতে থাকায় আগামী সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে চাইছে সরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে মোতাবেক কর্মসূচি ঠিক করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, পরিস্থিতি অনুকূল হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে মন্ত্রণালয়। তবে বিজ্ঞানসম্মতভাবে সংক্রমণের হার যে পর্যায়ে এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে তখনই খুলে দেওয়া হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। সোমবার দেশে করোনা সংক্রমণের হার ছিল ১৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এই হিসাবে দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে এমনটা বলা যাচ্ছে না।
সংক্রমণের হার কমার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে হবে। দেশে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এলে আগামী নভেম্বরে এসএসসি এবং ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষা বোর্ডগুলো পরীক্ষা আয়োজনের সব রকমের প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরে ধাপে ধাপে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সচিব সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা প্রোগ্রাম ঠিক করছে তাড়াতাড়ি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে।
দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হলে গত বছরের ১৭ মার্চ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর কয়েক দফা চেষ্টা করেও পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি না হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যায়নি, বরং দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়েছে। গতবছর এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও জেএসসির ফলাফলের গড় করে মূল্যায়ন ফল প্রকাশ করা হয়। তার ভিত্তিতেই তাদের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হচ্ছে। স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও আগের রোলে পরের ক্লাসে তুলে দেওয়া হয়। দেড় বছর ধরে ঘরে বসে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা হলেও তাতে তারা কতটা শিখতে পারছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে সংশ্লিষ্টদের। এমন পরিস্থিতিতে এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে তিন ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রথমে শিক্ষক-কর্মচারীদের টিকা দেওয়া, এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যসম্মত হিসেবে গড়ে তোলা এবং শেষে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে নজর দেওয়া।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রায় সবাই ভ্যাকসিন নিয়েছেন। চল্লিশের নিচে যাদের বয়স তাদেরও অনেকের নেওয়া হয়ে গেছে। যারা এখনও বাকি রয়েছেন তারা টিকা নিতে পারবেন। এ ছাড়া বিশ^বিদ্যালয় খোলার ক্ষেত্রে আবাসিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে, গাইডলাইন অনুসরণ করে ইতোমধ্যে খোলার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। মহামারিকালে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রায় ১ লাখ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে পুষ্টি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০ হাজার ২৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওজন মাপার যন্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে। যখন শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে আসবে তখন ওজন এবং উচ্চতা মেপে বিএমআই হিসাব করা হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় বিদ্যালয়গুলোর জন্য ৫ কোটি আয়রন ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট সরবরাহ করা হবে ছাত্রীদের জন্য।