উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক আস্তানা
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো মাদকের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। কতিপয় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী এই মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। তারা মিয়ানমার থেকে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের চালান এসব আস্তানায় নিয়ে আসে। পরে সেখান থেকে তা দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দেয় রোহিঙ্গা নারীরা। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে, ওই দুই উপজেলার ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইয়াবা সেবন ও বিক্রির অন্তত ৫ শতাধিক আস্তানা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (কক্সবাজার) সহকারী উপপরিচালক সোমেন মণ্ডল বলেন, গত তিন মাসে মাদকের ১০টি মামলায় ১২ রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব মামলায় আরও শতাধিক আসামি রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
তিনি জানান, অধিদফতরের সদস্যরা নিরস্ত্র হওয়ায় সব পরিস্থিতিতে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে অভিযানে যেতে হয়। বালুখালী সীমান্তে বসবাসকারী স্থানীয় এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে মিয়ানমার সীমান্ত মাত্র আধা কিলোমিটার। এক সময় রাখাইনের ইয়াবা গডফাদার রোহিঙ্গারা বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছে। তাদের সঙ্গে মিয়ানমারের মাদক সম্রাটদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। ওইসব মাদক সম্রাটের লোকজন ইয়াবার চালান সীমান্তের কাঁটাতার পার করে দেয়, পরে সেখান থেকে রোহিঙ্গারা তা ক্যাম্পের আস্তানায় নিয়ে আসে।
বালুখালী ক্যাম্পের এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, রাখাইনের ইয়াবা গডফাদার জামাল উদ্দিন, শওকত আলী, ডা. ছলিম, তার ভাই আকতার মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে বালুখালী দুই নাম্বার ক্যাম্পে। উখিয়ার ২২টি ক্যাম্পেই রয়েছে তাদের শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ২ বছর আগে মানবতার দোহাই দিয়ে যাদের আশ্রয় দিয়েছিলাম আমরা, সেসব রোহিঙ্গাই এখন আমাদের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি রাতে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে মাদকের হাট বসে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তা জানলেও নানা কারণে তারা অভিযান চালাতে পারেন না। তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জানান।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল মনসুর জানান, শুধু ক্যাম্পে নয়, ক্যাম্পের বাইরেও ইয়াবা এবং মাদক প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ ব্যাপারে কারও ছাড় নেই। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে আটক করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা জোরদার করতে সরকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে পাহাড়ি অঞ্চল ঘেঁষে ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন, ইনভেস্টিগেশন সেন্টার এবং ক্যাম্পজুড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন। বুধবার মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি জরুরি বৈঠক ছিল বলেও জানান তিনি। উখিয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গা ১১ লাখের বেশি। বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার।