প্রশংসায় ভাসছেন নুসরাতের আইনজীবী সাজু
বিশ্বজুড়ে আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার শুরু থেকে রায়ের দিন পর্যন্ত ঘটনা প্রবাহ এবং মামলার বাঁকে যে নামটি সব চেয়ে বেশী সামনে এসেছে তিনি হলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ফেনী জজকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম শাহজাহান সাজু।
এ মামলার প্রভাবশালী আসামীদের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে ফেনীসহ দেশবাসীর প্রশংসাও কুড়িয়েছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সর্ব মহলের প্রশংসায় ভাসছেন এ মানবিক আইনজীবী।
চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি নিয়ে শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) রাতে কথা হয় মানবিক এ আইনজীবীর সাঙ্গে।এসময় তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের ২৮ মার্চ থেকে যে লড়াই শুরু করেছিলাম অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য। ছয় মাস ১৭ দিন পর সে আইনি লড়াইয়ে জয়যুক্ত হয়েছি। নুসরাতের হত্যাকারীরা সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হয়েছে।’
সাজু বলেন, ‘এ মামলায় লড়ার কারণে আমার সহকর্মীরাই আমাকে টিপ্পনী কেটেছে, অশোভন ভাসায় কথা বলেছে এবং অনেকে মিথ্যাচার করেছে, সেসব বিষয়কে আমি তোয়াক্কা কিরিনি। সত্য প্রতিষ্ঠায় দীপ্ত পায়ে সমনে এগিয়ে গিয়েছি’। এ লড়াই সহজ ছিলোনা, অনেক কষ্ট শিকার করতে হয়েছে, গায়ের চামড়া কামড়ে মাটির দিকে তাকিয়ে লড়েছি আইনি লড়াই ।
এ লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার জন্য তিনি প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন, মহান আল্লাহর নিকট এর পর কৃতজ্ঞতা জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি।
কৃতজ্ঞতা জানান, ফেনীর নারী ও শিশু আদালতের মাননীয় বিচারক, সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা জজ বাহাদুরের আদালতের আদালতের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, পিবিআই কর্তৃপক্ষ, ফেনীর পুলিশ সুপারসহ পুলিশ প্রশাসন জেলা প্রশাসকসহ জেলা প্রশাসন, প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ও সর্বোপরি দেশবাসীর প্রতি।
দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৬ মাস মামলা পরিচালনার বিষয়ে এম.শাহজাহান সাজু বলেন, ‘এই মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আমার জীবনের এক বিরল অভিজ্ঞতা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আন্তরিকতা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানের কারণে মাত্র ৬১ কার্যদিবসেই মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছ।’
শাহজাহান সাজু আরও বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে দেশে বর্তমান সময়ে আইনের শাসন আছে।অপরাধী যত বড়ই হোক না কেন শাস্তি পায়।
নুসরাতের পরিবারের বিষয়ে সাজু বলেন, ‘নুসরাতের পরিবারকে আমি নিজের পরিবার করে নিয়েছি, শুধু মামলা চলাকালীন সময় নয়- বাকি জীবনটাও এ পরিবারটির সঙ্গে থাকার চেষ্টা করব। সাজু বলেন, মাত্র ছয় মাস সতের দিনের মাথায় মামলাটির রায় হয়েছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা।
রায়ের ব্যাপারে শাহজাহান সাজু বলেন, ‘বর্তমান সময়ে কোনো খুনিকে বা অপরাধীকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়া হয় না। আইন করে খুনের বিচার বন্ধ করা হয়না। রাষ্ট্র কোনো অপরাধীকে রাজনৈতিক পরিচয়ে রক্ষা করে না। যে দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ তার পরিবারের ১৭ জন সদস্যকে খুন করার পর যেই খুনিরা রাষ্ট্রীয় বেতার ও টেলিভিশনে খুন করেছে বলে নিজেরা স্বীকারোক্তি দেয়ার পরও ৭৫ এর খুনিদের বিচার হতে তথা বিচার পেতে প্রধানমন্ত্রীর ৪০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। আইন করে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করেছে। খুনিদেরকে ইনডেমনিটি দিয়েছে। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বানানো হয়েছে। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আজকে সেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে । খুনিরা শাস্তি পাচ্ছে, অল্প সময়ে নুসরাতের পরিবার বিচার পেয়েছেন।
মামলা পরিচালনার ব্যাপারে সাজু আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই মামলায় বিচার পেতে নুসরাতের পরিবারের এক টাকার কাগজও কিনতে হয়নি। সরকার পক্ষের সহায়তার পাশাপাশি নিজের পকেট থেকে মামলার সব খরচ বহন করেছি’।
সাজু আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নুসরাতের ভাই মামলার বাদী নোমান ব্যাংকে চাকরি পেয়েছে। সরকারি সাক্ষীরা যথা সময়ে আদালতে এসে সাক্ষী দিয়েছে। নুসরাতের গ্রামের বাড়িতে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারা দেয়া হয়েছে।
আলোচিত এ মামলাটির রায়ের ব্যাপারে সাজু বলেন,আমি দ্ব্যার্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, নুসরাতের মামলাটি দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এর ধারাবাহিকতায় বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার বিচারও বর্তমান সরকারের আমলেই অতি অল্প সময়ে নিষ্পত্তি হবে।
মামলার দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা এবং অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য শাহজাহান সাজু কৃতজ্ঞতা জানান, ফেনী জজ কোর্টের পিপি হাফেজ আহম্মদ, প্রবীণ আইনজীবী ও আওয়ামী লীগ নেতা আকরামুজ্জামানসহ নুসরাতের পক্ষের অবস্থান নেয়া সকল আইনজীবী ও মামলার বাদীসহ সাজু এন্ড অ্যাসোসিয়েটসের সদস্যদের।
সকলের কাছে দোয়া চেয়ে অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন,আমি সকলে দোয়া চাই,যেন ভবিষ্যতে এই দেশে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিটি সংগ্রামে লড়াই করতে পারি।
অ্যাডভোকেট সাজুর ব্যাপারে, নুসরাতের ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান বলেন, ‘অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু বিনা পয়সায় আমার বোনের মামলাটি পরিচালনার পাশাপাশি বিপদে আপদে আমাদের পরিবারের উপর ছায় হয়ে রয়েছেন। শাহজাহান সাজু সারা জীবন আমাদের পরিবারের অভিভাবক হয়ে থাকবেন।
প্রসঙ্গত, অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু আইন পেশা ছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সহযোগী সম্পাদক, ফেনী জেলা পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সভাপতি, দরবেশেরে হাট পাবলিক কলেজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, রঘুনাথ পুর হাইস্কুলের চেয়ারম্যান ও রুপালী ব্যাংকের ফেনী এলাকার আইন উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়া তিনি জেলার দাগনভূঞা উপজেলার সিন্দুরপুর ইউনিয়েনের সাবেক চেয়ারম্যান, ফেনী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ফেনী জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। আজীবন সদস্য হিসেবে আছেন ফেনী ডায়াবেটিক সমিতি, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রোগী কল্যাণ সমিতি ও ফেনী সমিতি ঢাকার।