রংপুর বিভাগসারাদেশ

ঘরের ভিতরে থকথকা কাদা,,নলকূপ ডুবে গেইছে, পায়খানা তলে গেইছে কি যে কষ্ট

কুড়িগ্রাম  :কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি হ্রাস পেতে শুরু করায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির  উন্নতি হয়েছে।  তবে   এখনও বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের ঘর-বাড়ি। এতে দুর্ভোগ আরো বাড়ছে বানভাসিদের। দীর্ঘ সময় ধরে পানিবন্দি থাকায় শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পনির চরম সংকটে পড়েছেন বন্যা দুর্গতরা।
এদিকে চারনভূমি তলিয়ে থাকায় ও গো-খাদ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নিজেদের খাবারের পাশাপাশি গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন  তারা।
এবারের বন্যায় জেলার ৫০টি ইউনিয়নের ২শ ৮৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। সরকারী হিসেবে এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে সোয়া লাখ মানুষ।
বন্যা কবলিত এলাকায় ২শ ৯৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এখনও বন্ধ রয়েছে পাঠদান। কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে নানারকম দুর্দশার চিত্র মিলেছে। বানভাসিরা জানিয়েছে সীমাহীন দুর্ভোগের কথা। সদর উপজেলার নূরানী পাড়া গ্রামের খাদিজা বেগম বলেন, নলকূপ ডুবে গেইছে, পায়খানা তলে গেইছে, বয়স্ক মানুষ আর বউ ঝিঊদের খুব সমস্যা হইছে। একই এলাকার আব্দুল হক ভারাক্রান্ত অবস্থায় বললেন, ঘরের ভেতর থকথকা কাঁদার উপর খাট রাখছি। শুলে ভয় হয় কহন খাট ভাঙ্গি পড়ি যাই। কোন রকমে রাইতটা পার করি। পাশাপাশি এরশাদুল, শুকুর, জব্বার আর বাচ্চূর বাড়ি। প্রতিটি বাড়ি ১৩/১৪ দিন ধরে পানি বন্দি। সদরের ভোগডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান, ঘোগদহ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক, যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর, বলেন পানিবন্দীদের তালিকা অনুযায়ী সব পরিবারকে এখনো সহযোগিতা করা সম্ভব হয়নি। তবে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মোঃ রাসেদুল হাসান  বলেন ,তাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ করছেন। ইতিমধ্যে সদর উপজেলার বন্যা কবলিত ৯৪ পরিবারকে ১৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন প্রতিদিন দুর্গম এলাকায় গিয়ে বন্যা কবলিতদের  খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শুকনো খাবার বিতরণ করছে ।
কৃষি বিভাগের তথ্যমত  জেলায় ১৪ হাজার হেক্টর জমির চিনা, কাউন, পটল, মরিচসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত ও পাট এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত থাকায় তা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রশিদ জেলায় ১৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, জেলায় ১১শ ৫৭টি মাছের খামার ভেসে যায়। এতে ১১শ ৬৩ জন মাছ চাষী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ক্ষতির পরিমাণ ১শ ৮০ কোটি টাকা।
কুড়িগ্রামর জেলা  প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, জেলায় এখন পর্যন্ত ৩৩৮ মেট্রিক টন চাল, ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ১৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকার শিশু খাদ্য, ও ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকার গো-খাদ্য ত্রাণ হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে । যার বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button