রাজশাহী বিভাগসারাদেশ

নওগাঁয় চুরি করে নদী খননের মাটি ইটভাটায়; ব্যবসায়ীদের হামলায় গ্রামবাসী আহত

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় তুলশীগঙ্গা নদী খননের মাটি রাতে-আধারে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ার সময় মাটি ব্যবসায়ীদের হামলায় নারীসহ কয়েকজন আহত হয়েছে। শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার সুলতানপুর-খিদিরপুর ব্রীজে মাটি ব্যবসায়ীদের শাস্তির দাবীতে উত্তেজিত গ্রামবাসী বিক্ষোভ করেছে। শুক্রবার রাতে খিদিরপুর গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। অন্যায়ভাবে হামলার ঘটনায় স্থানীয়রা মাটি ব্যবসায়ীদের শাস্তির দাবী করেছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ- নদী খননের কাজের সাথে যারা সম্পৃক্ত তাদের সহযোগীতায় মাটি ব্যবসায়ীরা রাতের-আধারে ভাটায় মাটি নিয়ে যাচ্ছিল।

জানাগেছে, নওগাঁ সদর উপজেলার খিদিরপুর, পিরোজপুর ও সুলতানপুর গ্রামের মাঝ দিয়ে তুলশীগঙ্গা নদী বয়ে গেছে। নওগাঁয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে তুলশীগঙ্গা নদী খননের কাজ চলছে। নদী খননের পর নদীর দুই পাশে মাটি রাখা হচ্ছে। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে মাটি ব্যবসায়ী দোগাছী গ্রামের আলী, পিরোজপুর গ্রামের শাফি, কাঁঠালতলীর নিজামুল ও রুস্তমসহ কয়েকজন নদীর মাটি নিতে ছয়টি ট্রাক্টর ও একটি স্ক্যাবিটর নিয়ে সুলতানপুর-খিদিরপুর ব্রীজে আসেন। প্রথমে মাটি নিতে গ্রামবাসীরা বাঁধা দিলে মাটি ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। মাটি ব্যবসায়ীরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে নারী-পুরুষের ওপর হামলা করলে কয়েকজন আহত। গ্রামবাসীদের সংখ্যা কম হওয়ায় তারা মসজিদের মাইকে সাহায্য চেয়ে ঘোষণা দেয়। এর কিছু পর পাশ্ববর্তী গ্রাম থেকে লোকজন আসা শুরু করলে মাটি ব্যবসায়ীরা ট্রাক্টর ও স্ক্যাবিটর রেখে পালিয়ে যায়। পরে গ্রামবাসীরা ট্রাক্টরের চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয়। সংবাদ পেয়ে রাতে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

খিদিরপুর মুন্সিপাড়া গ্রামের আহত গৃহবধু রওশন আরা ও মনোয়ারা বেগমসহ কয়েকজন বলেন, নদী খননের পর মাটি পাড়ে রাখা হচ্ছে। পাড় মজবুত হবে বলে আমরা মাটি নিচ্ছি না। অথচ দুইদিন আগেও রাতের আধারে চুরি করে মাটি ব্যবসায়ী আলী, শাফি, নিজামুল ও রুস্তমসহ কয়েকজন নিয়ে গেছে। শুক্রবার রাতে তারা আবারও মাটি নিতে আসলে আমরা বাঁধা দিলে তারা অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। দোসীদের শাস্তির দাবী জানান তারা।
একই গ্রামের আশরাফুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন আগে রাতে এসে কয়েক ট্রাক্টর মাটি নিয়ে যায়। এরপরেও দিন আসলে আমরা বাঁধা দিয়। কিন্তু হঠাৎ করে শুক্রবার রাতেও তারা মাটি নিতে আসলে বাঁধা দিলে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা করে। পরে মসজিদে মাইকিং করা হলে পাশের গ্রামের মানুষরা এসে আমাদের উদ্ধার করে।

দোগাছী গ্রামের ইটভাটার মালিক হাসানুর-আল-মামুন বলেন, ইটভাটা পরিচালনার জন্য বিভিন্ন মাটি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রাখতে হয়। আমার অজান্তে ভাগিনার সঙ্গে যোগাযোগ করে আলী নামে এক ব্যক্তি মাটির স্যাম্পুল (নমুনা) দেয়ার নাম করে ট্রাক্টর নিয়ে যায়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফোন আসে সমস্যা হয়েছে। মাটি দিবে; দিনে দিবে। কিন্তু রাতে কেন।
নদী খননের ঠিকাদার পক্ষের একজন জাহাঙ্গীর আলম স্বপন বলেন, মাটি দেখার দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের। মাটি যারা নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করছিল তাদের সঙ্গে জড়িত না। জনগন কি বলবে না বলবে তাদের ব্যাপার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফউজ্জামান খান বলেন, আমাদের ‘মাটি ব্যবস্থাপনা কমিটি’ আছে। শুনেছি গত কয়েক দিন থেকে মাটি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। যেহেতু আমরা তাদের চিনিনা। এজন্য অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও মাটি ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের প্রক্রিয়া চলছে।
নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, রাতের আধারে নদী খননের মাটি ট্রাক্টর করে বহনের সময় স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তবে তার আগেই তারা পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে অভিযোগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এরপর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button