সারাদেশ

নওগাঁয় ধানের বাম্পার ফলন, কিষাণীর হাসিমাখা মুখ

মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁয় মনের আনন্দে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ চলছে। কাটা মাড়াইয়ের শুরুতেই কৃষকরা তাদের কষ্টের ধান বাজারে ভালো দামে বিক্রি করতে পেরে খুশি। এদিকে ধান কাটা মাড়াই শুরু হওয়াতে এ প্রভাব পড়েছে নওগাঁর চালের বাজারে। সকল ধরনের চাল প্রতি কেজিতে গত এক সপ্তাহ থেকে ৪ টাকা থেকে ৫ টাকা কমে কেনা বেচা হচ্ছে।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবার জেলার ১১ উপজেলায় বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকা, স্বল্প মূল্য সার, তেল ও কৃষিতে সরকারের ভর্তুকী দেওয়ায় এখানকার চাষীরা এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ৫০০ হেক্টর বেশি জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও জমিতে রোগবালাই না দেখা দেওয়ায় বোরো ধানের বাম্পার ফল হয়েছে।

ইত্যেমধ্যে ধান পেকে যাওয়ায় ১০-১২ দিন আগে থেকে খাদ্যে উদ্বৃত্ত নওগাঁয় ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। প্রতি বিঘায় চিকন জাতের ধান ২২ মণ থেকে ২৭ মণ এবং মোটা জাতের ধান ২৮ মণ থেকে ৩২ মণ ধান উৎপাদন হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় প্রতি বিঘায় ধান বেশি উৎপাদন ও বাজারে বেশি দামে কেনা-বেচা হচ্ছে।
বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় ১০০ টাকা বেশি দরে প্রতি মণ ধান কেনা বেচা হচ্ছে। মোটা জাতের ধান ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা এবং চিকন জাতের ৭০০ টাকা থেকে সাড়ে ৮০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি মণ কেনা বেচা হচ্ছে।

জেলার মহাদেবপুর উপজেলার খোর্দনারায়নপুর গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান জানান, তাদের নিজের জমিতে প্রতি বিঘা ধান লাগানো থেকে মাড়াই শেষে প্রায় ৮ হাজার খরচ হয়েছে। তিনি বুধবার দেড় বিঘা জমির জিরাশাইল ধান মাড়াই শেষ করেছেন। এই পরিমাণ জমি থেকে ৩৮ মণ ধান পেয়েছেন। প্রতি বিঘায় ধান গড়ে ২৫ মণের উপর উৎপাদন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ভালো ধান উৎপাদন হয়েছে। বাজারে ধানের দাম ভালো থাকায় তাদের প্রায় ১০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।

ভীমপুর গ্রামের বর্গাচাষী মোশারফ হোসেন জানান, তিনি ১২ বিঘা জমিতে জিরাশাইল, গোল্ডেন আতব, কাটারি ভোগ ধান ধান চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৭ বিঘা জমি বর্গা করেছেন। বোরো আবাদের সময় জমির মালিককে প্রতি বিঘায় ৭ মণ দিতে হয়। বাকি প্রায় ১৮ মণ ঘরে তুলেছেন। বর্তমান দাম হিসেব করলে বর্গা চাষীদের মাত্র চার হাজার টাকার মতো লাভ থাকে। তবে এই টাকাকে লাভ বলা চলে না।

এদিকে নতুন ধান বাজারে আসতেই এর প্রভাব পড়েছে নওগাঁর চালের বাজারে। গত এক সপ্তাহ আগে থেকে নওগাঁয় সকল ধরনের প্রতি কেজি চাল ৪ টাকা থেকে ৫ টাকা কমে কেনা বেচা হচ্ছে।
নওগাঁর চাল ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে খুচরা বাজারে চিনি আতব ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকা, বাসমতি ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা, সম্পা কাটারী ৫৮ টাকা থেকে ৬০ টাকা, পাইজাম ৫০ টাকা থেকে ৫২ টাকা, জিরাশাইল ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকা, খাটো জিরা ৪৫ টাকা থেকে ৪৮ টাকা, রঞ্জিত ৪০ টাকা থেকে ৪২ টাকা, বিআর আঠাশ ৪৪ টাকা থেকে ৪৫ টাকা এবং স্বর্ণা ৩৮ টাকা থেকে ৪০ টাকায় কেনা বেচা হচ্ছে।
নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উত্তর কুমার জানান, নুতন ধান বাজারে আসায় চালের দাম কমেছে। বাজারে বর্তমানে তেমন কেনা-বেচা নেই। জেলায় পুরোদমে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হলে চালের বাজার আরো কিছুটা কমবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

জেলা চাল কল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন জানান, কৃষকদের ধানের নায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ধান ও চাল বেশি করে কিনছে। বর্তমান ধানের বাজার যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আগামীতে কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহী হবেন।

জেলা চাল কল মালিক গ্রুপের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক জানান, সরকারীভাবে চলতি বোরো মৌসুমে ৩৬ টাকা দরে ১০ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, ৩৫ টাকা দরে দেড় লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল মিলারদের কাছ থেকে এবং ২৬ টাকা দরে ৮ লাখ মেট্রিক টন কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অপরদিকে নওগাঁর ১ হাজার ১০০ চাতাল মালিকরা ধান কেনা শুরু করায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধানের নায্য মূল্য পাচ্ছেন। সরকারী বেশি করে কৃষকদের কাছে থেকে ধান ও মিলারদের কাছে থেকে চাল কেনায় বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জিএম ফারুক হোসেন পাটোয়ারী জানান, জেলায় মিলারদের কাছ থেকে ৪৯ হাজার ২৬০ মেট্রিক টন চাল ও ৬ হাজার ৫১ মেট্রিক টন আতপ চাল কেনা হবে। অপরদিকে কৃষকদের কাছে থেকে লটারী ও কৃষি অ্যাপসের মাধ্যমে সরাসরি ২৩ হাজার ২৩২ মেট্রিক টন ধান কেনা করা হবে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, নওগাঁয় ১৬ ভাগ ধান কাটা মাড়াই শেষ হয়েছে। জেলায় চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন ধরা হলেও ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় ৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হবে। এর মধ্যে চিকন জাতের ধান ১ লাখ ৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। চিকন জাতের ধান থেকে ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন ধরা হয়েছে। আর মোটা জাতের ধান ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। মোটা জাতের ধান থেকে দেড় লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি চাল উৎপাদিত হবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button