সারাদেশ

নওগাঁয় মাল্টা চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষীদের

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় অন্যান্য কৃষি ফসলের পাশাপাশি সুস্বাদু পুষ্টিকর রসালো ফল মাল্টা চাষে ঝুঁকেছেন চাষীরা। এখন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাল্টা চাষের প্রতি আগ্রহী বেড়েছে। তবে অন্যান্য ফল ও ফসলের দাম কমে যাওয়ায় এবং খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় মাল্টার দিকে ঝুঁকেছেন চাষীরা। চাষীরা বলছেন, নতুন জাতের ফল ও ফসলের প্রতি সবারই আগ্রহ থাকে। স্থানীয় ভাবে উৎপাদন করা যে কোন ফলের প্রতি ক্রেতাদেরও আগ্রহ থাকে এবং দামও ভাল পাওয়া যায়। এ কারণে কৃষকরা মাল্টা চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়েছেন। এছাড়া মাল্টা চাষে আবহাওয়া অনুকুলে ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ সহিঞ্চু।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট ৫১ হেক্টর জমিতে বারি-১ মাল্টা চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে নওগাঁয় ২ হেক্টর, রানীনগরে ২ হেক্টর, আত্রাইয়ে দশমিক ২৫ হেক্টর, বদলগাছীতে ৫ হেক্টর, মহাদেবপুরে দশমিক শূন্য ৫ হেক্টর, পতœীতলায় ৫ হেক্টর, ধামইরহাটে ২০ হেক্টর, সাপাহারে ৫ হেক্টর, পোরশায় ৬ হেক্টর, মান্দায় দশমিক ৫ হেক্টর, নিয়ামতপুরে দশমিক ২৫ হেক্টর।

কৃষি বিভাগ বলছে, মাল্টা একটি সুস্বাদু ফল। জেলায় সুস্বাদু এ পুষ্টিকর রসালো ফল চাষ করা হচ্ছে। এলাকার বেকার যুবকরাও অন্যান্য ফসল চাষের পাশাপাশি মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ভাল দাম পাওয়ার আশায় কৃষকদের নতুন ফল ও ফসলের প্রতি আগ্রহ থাকে। জেলার কয়েকটি এলাকায় ভারমিক পদ্ধতিতে বারি-১ মাল্টা চাষের উপযোগী জমিতে চাষ করা হচ্ছে। যেখানে কৃষকরা ধানের পাশাপাশি মাল্টা চাষ শুরু করেছেন। তবে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভালো জাতের মাল্টা গাছের চারা রোপণ করতে পারলে এবং নিবিড় পরিচর্যায় মাল্টার ফলন ভালো হয়।

গত ৩ বছর থেকে নওগাঁয় মাল্টা চাষ শুরু হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের উদ্বৃদ্ধ করা হচ্ছে এবং চাষীদের সার্বিক সহযোগীতা করা হচ্ছে। গত বছর সুস্বাদু রসালো এই মাল্টা স্থানীয় বাজারে স্বল্প আকারে বিক্রি করা হয়েছিল। কোন ধরনের রাসায়নিক প্রয়োগ ছাড়াই জমি থেকে মাল্টা বিক্রি করা হয়েছে। ক্রেতারা স্থানীয় এসব ফল কিনতেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। স্বাদও মোটামুটি ভাল বলে জানা গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী বলে মনে করছেন চাষীরা।

রানীনগর উপজেলার বেদগাড়ী গ্রামের মাল্টা চাষী মাসুদ পারভেজ বলেন, বছর বছর ধানের দাম কমায় লোকসানে পড়তে হয়েছে। কোন ফল বা ফসলের দাম এক বার পাওয়া গেলে কৃষকরা পরের বছর ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই আবাদ করে। এতে করে একই ফসল বাজারে থাকায় দাম কম পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, নতুন প্রযুক্তিতে নতুন ফসলের দিকে আগ্রহী বাড়িয়েছি। গত ২০১৮ সালে এক একর জমিতে কৃষি অফিস থেকে প্রদর্শণী নিয়ে ও নিজে কিছু বারী-১ জাতের মাল্টার চারা দিয়ে শুরু করেছি। বাগানে প্রায় ২০০টি মাল্টার গাছ আছে। মাল্টা চাষে কৃষি অফিস থেকে সার্বিক পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রথম দফায় ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রায় ৪০-৪৫ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি। এ বছর গাছে প্রচুর ফুল আসছে। গাছে ফল আসলে বুঝতে পারবো লাভজনক কিনা। নওগাঁতে এ ফলের বেশ চাহিদা রয়েছে। মাল্টা চাষে তেমন খরচ বা শ্রম দিতে হয়না বলেও জানান তিনি।
ধামইরহাট উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের কৃষক রেজুয়ান হোসেন বলেন, প্রায় ১৮ বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ করা হয়েছে। গাছে ফুল আসা শুরু করেছে। মাল্টা চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়ার কারণ টা হচ্ছে- এটা নতুন একটা ফসল। তুলনামুলক ভাবে অন্যান্য ফসল থেকে ঝামেলা ও পরিশ্রম কম। এছাড়া প্রাকৃতিক দূর্যোগে ভেঙে যাওয়ার কোন সম্ভবনা থাকে না। আশা করছি ভাল একটা ফল পাবো।

রানীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, মাল্টা একটি পুষ্টিকর ফল। মাল্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বক্ষনিক পরামর্শ ও সহযোগীতা করা হচ্ছে। পরিচর্চা করার ফলে রোগ-বালাই না থাকায় বারি-১ জাতের মাল্টা চাষে ভাল ফলন পেয়েছে কৃষকরা। বাজারে এর চাহিদা বেশি থাকায় ভাল দাম পেয়ে কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। যেহেতু স্বল্প পরিমানে মাল্টার আবাদ করা হয়েছে। আগামীতে এর আবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে।
ধামইরহাট উপজেলা কৃষি অফিসার মো: সেলিম রেজা বলেন, কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের মাল্টা চাষে উদ্বৃদ্ধ করা হচ্ছে। গত তিন বছর থেকে মাল্টা চাষ শুরু হয়েছে। এ উপজেলায় প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৩০টি প্রদর্শণী প্লট রয়েছে। আমাদের এলাকার জমি মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী এবং আবহাওয়া অনুকুলে রয়েছে। বারী-১ একটি সুস্বাদু ফল হওয়ায় চাহিদাও বেশি এবং লাভজনক।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button