রাজশাহী বিভাগসারাদেশ

নওগাঁ সদর হাসপাতালে ২মাস ধরে ডিজিটাল এক্সরে বন্ধে বিপাকে রোগীরা

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁ সদর হাসপাতালে ডিজিটাল এক্সরে মেশিনে গত দু’মাস থেকে ফিল্ম না থাকার অজুহাতে কোটি টাকার মেশিন বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। এতে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের। বাহিরের ল্যাবে এক্সরে করতে গিয়ে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে তাদের। আর মাঝখান থেকে লাভবান হচ্ছে কিছু ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। মেশিনটি বন্ধ হয়ে পড়ে থাকলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনীহায় ডিজিটাল এক্সরে মেশিনটি আর কাজে আসছে না বলে মনে করছেন সচেতনরা।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বরে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর অ্যান্ড ডিপো (সিএমএসডি) থেকে দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানি ‘৫০০এমএ-সিআর চায়না মডেলের একটি ডিজিটাল এক্সরে মেশিন সরবরাহ করা হয়। এর সাথে তিন সাইজের ৩শ’টি ফিল্মও দেয়া হয়। এরপর ২০১৭ সালের অক্টোবরে এক্সরে চালু করা হয়। হাসপাতালে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রায় শতাধিক এক্সরে করা হয়। যেখানে ডিজিটাল এক্সরের ছোট ফিল্মের মূল্য ১৫০ টাকা এবং বড় ফিল্মের মূল্য ২০০ টাকা। অপরদিকে নরমাল সাদাকালো এক্সরে বড় ফিল্মের মূল্য ৭০ টাকা এবং ছোট ফিল্মের মূল্য ৫৫ টাকা।
হাসপাতালের ডিজিটাল এক্সরে মেশিন গত দু’মাস থেকে ফিল্ম না থাকায় তা কাপড় দিয়ে জড়িয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। বাহিরের ক্লিনিকগুলোতে ডিজিটাল এক্সরে করতে সর্বনি¤œ ৩শ টাকা দিতে হয়। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারীতে ডা. মুমিনুল হক হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করেন। ডিজিটাল এক্সরে মেশিনের ফিল্ম শেষ হওয়ার অজুহাতে মেশিনটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
শহরের আরজি-নওগাঁ মধ্যপাড়ার গৃহবধু শরিফুন বিবি জানান, প্রায় দুইমাস আগে পানি উঠাতে গিয়ে নলকুপের হাতলে বাম হাতের বাহুতে আঘাত লাগে। ঔষুধে কোন কাজ না হওয়ায় হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন। হাসপাতালে ডিজিটাল এক্সরে হয়না। তাই বাহিরে গিয়ে ক্লাসিক ডিজিটাল ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ৪শ টাকা দিয়ে এক্সরে করেছেন। বাহিরে এক্সরে করায় তার ২শ টাকা বেশি লেগেছে।
হাসপাতালের রেডিওলোজি এন্ড ইমিজিং ইনচার্জ সিরাজুল হক জানান, গত দেড় মাস থেকে এক্সরে মেশিনটি ফিল্মের অভাবে বন্ধ হয়ে আছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হলে টেন্ডারে মালামাল কেনা যায়নি বলে জানিয়েছেন। বিকল্প হিসেবে নরমালে (সাদাকালো/ এনালগ) এক্সরে চালাতে বলেছেন। বন্ধ হয়ে থাকলে কোটি টাকা দামের ডিজিটাল এ মেশিনটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
হাসপাতালের স্টোর কিপার সাজ্জাদ হোসেন জানান, গত ছয়মাস আগে একটি টেন্ডার হয়েছিল। সেখানে নরমাল এক্সরের জন্য ফিল্ম কেনা হয়। কিন্তু পিপিআর বইয়ে ডিজিটাল এক্সরে মেশিনের ফিল্ম সরবরাহের কোন রেট কোর্ড (মূল্য নির্ধারন) না থাকায় তা বাদ হয়ে যায়। ওই বরাদ্দ দিয়ে কেমিকেল কেনা হয়েছে।
নওগাঁ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুমিনুল হক জানান, হাসপাতালে ডিজিটাল এবং নরমাল/ এনালগ দু’টো এক্সরে মেশিন আছে। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালায় (পিপিআর) ডিজিটাল এক্সরে মেশিনের আওতায় ফিল্ম সরবরাহের কোন বরাদ্দের কথা উল্লেখ নাই এবং কোন টেন্ডারও হয়নি।
তিনি আরো জানান, স্থানীয় উদ্যোগে কিছুদিন এ এক্সরেটি চালানো হয়েছিল। ফিল্ম শেষ হওয়ার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে নরমাল এক্সরে চালু আছে। এখন কেন ডিজিটাল চালানো হচ্ছে না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন- যেহেতু পিপিআর বইয়ে কোন রেট কোর্ড নাই, তাই হাসপাতালে ফিল্ম সরবরাহ করা হচ্ছেনা। কিছুদিন আগেও যেখানে ডিজিটাল এক্সরে চালু ছিল, এখন সেভাবে চালানো সম্ভব কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button