বরিশাল বিভাগসারাদেশ

প্রণোদনার আশায় কুড়িগ্রামের দেড় লক্ষাধিক কৃষক

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: পরপর পাঁচ দফা বন্যায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কুড়িগ্রামের নয় উপজেলার দেড় লক্ষাধিক কৃষক। প্রথম তিন দফা বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় এসব কৃষক ধারদেনা করে উঁচু এলাকা ও বাইরের জেলা থেকে চড়া দামে আমন চারা সংগ্রহ করে নতুন করে জমিতে রোপণ করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে চতুর্থ ও পঞ্চম দফা বন্যায় জেলার ১৮ হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসল আবারো পানিতে তলিয়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন।

সরেজমিন ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরপর তিন দফা দীর্ঘমেয়াদি বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আর বন্যা হবে না ভেবে তারা ধান, পাট ও গরু, ছাগল বিক্রি করে নতুন করে আমনের চারা লাগিয়েছিলেন। কিন্তু সে আমন ক্ষেতও পানিতে তলিয়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ফসল নষ্ট হলে আগামীতে কীভাবে দিন পার করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের মজিবর রহমান জানান, কৃষির ওপর নির্ভরশীল হয়েই আমাদের বেঁচে থাকতে হয়। কিন্তু এ বছর ঘন ঘন বন্যায় সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। টাকা ধার নিয়ে নতুন করে লাগানো চার বিঘা আমন ক্ষেতও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ বছর এত বড় ক্ষতি হয়ে গেলেও সরকার থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি।

উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের কৃষক জামাল হোসেন জানান, পরপর দুই দফায় আমন বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর কৃষি বিভাগ থেকে যে আমন চারা দিয়েছিল তা মাত্র আধা বিঘা জমিতে লাগাতে পেরেছি। বাকি সাড়ে চার বিঘা জমি ধান বিক্রি করে ফুলবাড়ী উপজেলার খড়িবাড়ি এলাকা থেকে এনে আমন চারা লাগিয়েছিলাম। প্রতি বিঘায় খরচ পড়েছে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। চতুর্থ ও পঞ্চম দফা বন্যায় সে আবাদও শেষ। এখন সামনের রবি মৌসুমে কীভাবে চাষাবাদ করব বুঝে উঠতে পারছি না।

সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের কলেজ মোড় এলাকার কৃষক ইদ্রিস আলী জানান, আমার দুই বিঘা জমির বেগুনসহ অন্যান্য সবজি চলতি বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আর চাষাবাদ করার মতো কোনো টাকা হাতে নেই। সরকারি সহায়তা ছাড়া এবারের বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, প্রথম তিন দফা বন্যায় জেলায় ১১ হাজার ৬৬২ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, আউশ, শাকসবজি, ভুট্টা, তিল, কাউন, চীনাবাদাম, মরিচ ও পাটসহ বিভিন্ন ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। এতে টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় ১৪০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

আর চতুর্থ ও পঞ্চম দফা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে সাড়ে ১৮ হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ শামসুদ্দিন মিঞা বণিক বার্তাকে বলেন, প্রথম তিন দফা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জেলার নয় উপজেলায় ৬২ হাজার ৮৭৪ জন কৃষককে এক বিঘা করে জমিতে লাগানোর জন্য আমন চারা, মাষকলাই বীজসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ১০ হাজার ৯০০ জন কৃষকের মাঝে ১৪ প্রকার সবজির বীজ বিতরণ করা হচ্ছে। চলতি বন্যায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণের কাজ চলছে। আগামী রবি মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা করার জন্য সরিষা বীজ, গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ, চীনাবাদাম ও সূর্যমুখীর বীজ প্রদানের জন্য চরাঞ্চলের ২৯ হাজার ২১০ জন কৃষকের তালিকা করে পাঠানো হয়েছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, এবারের দীর্ঘমেয়াদি বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারিভাবে কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। ফসলের ক্ষতি নির্ধারণ করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হবে। সরকারি সহযোগিতা এলে কৃষকরা তা কৃষি কার্ডের মাধ্যমে পাবেন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button