রাজশাহী বিভাগসারাদেশ

ভোলাহাটে চার জয়িতার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

ভোলাহাট(চাঁপাইনবাবগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ ভোলাহাট উপজেলার চার জয়িতার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প শুনতে ছুটে যায় তাঁদের কাছে। চারজনের সাথে গল্প হয়। তাঁরা বলেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে সহযোগিতায় ঘুরে দাঁড়িয়েছি। ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর আমাদের সফলতার কথা বিবেচনা করে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র দিয়ে পুরুস্কৃত করেছিলেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর।
সফলতার গল্প শুরু করি জয়িতা উপজেলা হাঁসপুকুর গ্রামের মোঃ রফিকুল ইসলামের মেয়ে মোসাঃ সারমিন আকতারের সাথে। তিনি বলেন, দরিদ্র পরিবারে একমাত্র আয় করেন আমার বাবা। টানা-পড়েনের সংসারে ৩জন সন্তানকে লেখা-পড়া করান। কুলিয়ে ইঠতে না পেরে একটু বড় হতেই বাল্যবিয়ে দিয়ে দায় সারেন। শ^শুর বাড়ীতে গিয়ে আমার মত ছোট মানুষের উপর যৌতুকের দাবীতে শ^শুর বাড়ীর সবাই শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন চালাই এমন কি নেশাগ্রস্থ স্বামীও। তাঁদের নির্যাতন সইতে না পেরে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে আবার দরিদ্র পরিবারের বোঝা হতে হয়। অবশেষে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ গ্রহণের পাশাপাশি এসএসসি ও এইচ এসসি পাশ করে নিজেকে ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।
অপর একজন গোপিনাথপুর গ্রামের মোঃ নাসির উদ্দিনের মেয়ে জয়িতা মাহবুবা। তিনি বলেন অস্বচ্ছল পরিবারে জন্ম গ্রহণ করে ৯ম শ্রেনি থেকে পড়া-লেখা শেষ। ছোটতেই বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়। নিজেকে বড় হওয়ার স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু অভাবের তাড়নায় তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। আমার কোল জুড়ে মেয়ে ও ছেলে আসে। তাঁদের মাঝে আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে মাথার ঘাম পায়ে ঝরাতে শুরু করি। প্রতিবেশির কাছ থেকে শুনে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে সেলাই মেশিনের কাজ শিখি। এ থেকে মেয়ে ও ছেলে দুজনকে ¯œাতকোত্তর পর্যন্ত লেখা-পড়া করাতে সক্ষম হই। আমার ছেলে-মেয়ে দুজনেই সরকারি চাকুরি করছে। আমি এখন খুব সুখি মানুষ।
ছুটে যায় দূর্গাপুর গ্রামের মৃত তোহর আলীর স্ত্রী সফল নারী মোসাঃ নিলুফার কাছে। তিনি জানান, আমি খুব মেধাবি ছাত্রী ছিলাম। ৮ম শ্রেনি পর্যন্ত ক্লাসে ১ম স্থান অধিকার করতাম। মতামতার কোন দাম না দিয়ে ¯œতক ডিগ্রী পাশ এক ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেন। সব স্বপ্ন ভাঙ্গচুর হয়ে যায়। স্বামীর বয়স ২৫/৩০। বিয়ের পর পেটে বাচ্চাও আসে। এ সময় শুরু হয় যৌতুকের দাবীতে শ^শুর-শ^াশুড়ির নির্যাতন। স্বামিকে ভুল বুঝিয়ে নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। তাঁদের যৌতুকের দাবী মেটাতে সহায় সম্বল বিক্রি করে দেন আমার বাবা-মা। কিন্তু তারপরও আমার কপালে সুখ সইলনা। স্বামী ২য় বিয়ে করে বসেন। ২বছর বাবার বাড়ি থাকার পর সামাজিকতার মাধ্যমে তাঁর বাড়ি নিয়ে যান স্বামী। এরি মধ্যে ২ সন্তানের মা হয়ে যায়। স্বামী সংসার চালাতে না পারায় অত্যন্ত কম পারিশ্রমিকে চট্রগ্রামের একটি চামড়ার কোম্পানিতে চাকুরি নেন। সেখানে তাঁর মৃত্য হলে লাশ নিয়ে আসার মত ক্ষমতা ছিলো না। স্বামীর মৃত্যুর পর বিভিন্ন ভাবে কষ্টের মধ্যে দিন চলতে থাকে। পরে এলাকাবাসির ভালোবাসায় ইউনিয় পরিষদের মেম্বার নির্বাচিত হয়ে বাল্যবিয়ে রোধসহ বিভিন্ন প্রকার উন্নয়নমূল কাজে জড়িয়ে বেশ ভালোই আছি বলেন তিনি। সুরানপুর গ্রামের মোঃ জিয়াউদ্দিনের মেয়ে মোঃ জাকেরা। দিনমজুর পরিবারে জন্ম। আমরা চার ভাই-বোন। আমরা যখন ছোট তখন বাবা আরেকটা বিয়ে করে অন্যত্রে চলে গেলে মা আমাদের লালন পান করেন। খেয়ে না খেয়ে চলতে থাকে আমাদের জীবন। ছোটতেই বিয়ে হয় আমার। সুখেই কাটছির সংসার। হঠাৎ অসুস্থ হলে পেটে বাচ্চা নিয়ে স্বামী আমার মায়ের কাছে আমাকে ফেলে যায়। মায়ের বাড়ীতেই আমার ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এ সময় সমাজের লোকজন নানা প্রকার কাথা বার্তা বলে তীরোস্কার করে। এমন সময় হাঁস-মুরগী, সবজি চাষ করে সংসার চালাতে লাগলাম। ছেলে বড় হতে থাকে। সে এখন এসএসসি পাশ করেছে। ছেলে অন্যের কাজ করে এবং আমার আয় দিয়ে চলে পড়া-লেখার খরচ। বর্তমানে বেশ ভালো আছি বলে জানান তিনি। তাঁদের এ গল্প নির্যাতিতা যে সব নারীরা রয়েছেন। তঁদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা যোগাবে এমনটাই দাবী করলেন ভোলাহাট উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা(অঃদঃ) মোসাঃ রহিমা রওনক।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button