রংপুর বিভাগসারাদেশ

লজিক প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ: সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার!

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কৌশলে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের বা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাভবান হওয়ার বিষয়টি নতুন নয়। সরল দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে সব ঠিকই আছে। কিন্তু অনুসন্ধান করলেই প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসে। লজিক প্রকল্পের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে দাঁতভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল হকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করেন স্থানীয় যুবলীগ সভাপতি আমির হোসেন।
সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানাগেছে, রৌমারী উপজেলায় ৪টি ইউনিয়নে স্থানীয় সরকার বিভাগ লোকাল গভর্নমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (লজিক) প্রকল্পের প্রায় কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে লজিক প্রকল্পের দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নে ২২ লাখ টাকা, শৌলমারী ইউনিয়নে ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকা, বন্দবেড় ইউনিয়নে ২৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও রৌমারী সদর ইউনিয়নে ২৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে রাস্তা মেরামত, বৃক্ষ ও বাসক পাতার চারা রোপন, পাবলিক টয়লেট, টিউবওয়েল, গাইডওয়াল ও রিং-কালভার্ড নির্মাণ ও কৃষি খাতে বীজ সার বিতরণ।
লিখিত অভিযোগ নিয়ে প্রকল্প এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ডিগ্রীরচর শামছুলের বাড়ি থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তাটি মাটি দিয়ে ৩ ফুট উঁচুকরণ এবং দুই পার্শ্বে গাছ লাগানো (বাসক পাতার চারা রোপন প্রকল্পটির মধ্যে মাটির কাজ না করলেও ৮৩টি বাসক পাতার গাছের ছাড়া রোপন করেন। তবে ৮৩টি গাছের মূল্যে আনুমানিক ১ হাজার টাকা। তবে ওই খাতে ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। একইভাবে বদির মোড় থেকে শালুর মোড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তাটির দুই পার্শ্বে বৃক্ষরোপন প্রকল্প (বাসক পাতারচারসহ উল্লেখ রয়েছে এতে ২২০টি গাছ পাওয়া গেছে। যাতে ২২০টি গাছের আনুমানিক মূল্যে ৩ হাজার টাকা। সেখানে বরাদ্দ দেয়া আছে ৫ লাখ টাকা।
এদিকে হাজির হাট বাজারে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দের একটি পাবলিক টয়লেট ও টিউবওয়েল স্থাপন হওয়ার কথা সরকারি কিংবা হাট পেরিফেরি জায়গায়। কিন্তু পাবলিক টয়লেট ও টিউবওয়েল ব্যক্তি মালিকানা জায়গায় ওই প্রকল্পটির কাজ করেন। এতে নি¤œমানের কাজ হয়েছে বলে অনেকই অভিযোগ করেন। পাশাপাশি পথচারী ও হাট-বাজারে আসা ব্যক্তিরাও টয়লেট ব্যবহারে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
স্থানীয় মতিয়ার রহমান, জয়নাল, মিঠুসহ আরো অনেকই অভিযোগ করে বলেন, টয়লেট সবসময় তালা দিয়ে বন্ধ থাকায় অনেক জনসাধারণ বিপাকে পড়েন। অন্যদিকে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রকল্পটি ৫নং ওয়ার্ডের মুখতোলা জাবেদ আলীর বাড়ি হইতে ইউসুফের বাড়ি পর্যন্ত ২৫০ ফিট গাইডওয়াল নির্মাণের অভিযোগও রয়েছে। এতে লজিক ৪টি উন্নয়ন প্রকল্পে দাঁতভাঙ্গায় ইউনিয়নে ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আমির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘লজিক প্রকল্পের কাজ উপজেলা প্রশাসন সঠিকভাবে তদারিক না করে চেয়ারম্যানের সাথে যোগসাজসে বরাদ্দের টাকা আত্মসাত করেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়ও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।’
অপর দিকে শৌলমারী ইউনিয়নে লজিক ৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে ৮ নং ওয়ার্ডের টালুয়ার চর থেকে লাল মিয়ার বাড়ি হতে বাদশার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় ৫ফুট মাটি দিয়ে উচুকরণ ও বৃক্ষ রোপন করার কথা থাকলেও আংশিক মাটির কাজ করে। ওই রাস্তায় বৃক্ষ রোপন করার কথা থাকলেও বৃক্ষ (বাসক পাতারচারা) রোপনের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এতে প্রকল্পটিতে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। একইভাবে ৩ নং ওয়ার্ডের কলমের চর শাহার বাড়ি থেকে গয়টাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাস্তার করিম আর্মির বাড়ির পুকুরের ধারে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় ২শত ফুট গাইডওয়াল নির্মাণ করা হলেও সেখানে নি¤œমানের কাজ হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। শৌলমারী ইউনিয়নে ৪টি উন্নয়ন প্রকল্পে ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দাঁতভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল হক বলেন, ‘অভিযোগ হতেই পারে। একটি প্রকল্প পাশ করে আনতে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। কাজে প্রকল্পের বরাদ্দ অনুযায়ী অনেক সময় সঠিক কাজ হয়না।’
তবে অভিযোগের বিষয় শৌলমারী ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিল বলেন, ‘প্রকল্পগুলোর কাজ সঠিকভাবে করা হয়েছিল। কিন্তু বন্যা হওয়ায় মাটি ও গাছের চাড়াগুলো নষ্ট হয়েছে।’
লজিক প্রকল্পের কুড়িগ্রাম জেলা সমন্বয়কারী মো. মুসা বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন ও ইউপি চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি লজিক প্রকল্প বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।’
এ প্রসঙ্গে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল ইমরান জানান, ‘লজিক প্রকল্পের সঠিক তদারিক করা হয়েছে। এতে কোন অনিয়ম করা হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, দাঁতভাঙ্গা থেকে প্রকল্পের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button