রংপুর বিভাগ

নীলফামারীতে ট্রেনের ধাক্কায় অকালে প্রাণ গেল চারজন অটোবাইক যাত্রীর

নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি: সেফালী বেগম, সাহেরা বেগম, রোমানা বেগম ও মিনা পারভীনের যাওয়া হলো না নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড’র একটি শিল্প প্রতিষ্ঠাণে কাজে। তারা লাশ হয়ে ফিরলো নিজ বাড়িতে। এ চারজন নারী শ্রমিকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আহত অপর চারজনের মধ্যে দুইজন নীলফামারী জেনারেল হাসপাতাল ও দুইজন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
আজ বুধবার সকাল সাতটার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি চিলাহাটীর দিকে ছুটে যাচ্ছিল। এ সময় চারদিক ছিল ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন। ঠিক এই সময় অটোবাইকটি আটজন যাত্রী নিয়ে নীলফামারী দারোয়ানী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন একটি অরক্ষিত রেল ক্রসিং পার হচ্ছিল। এতে ট্রেনের ধাক্কায় বাইকটি বেশ কিছুদুর হিচরে যাওয়ার পরে যাত্রী নিয়ে রেল লাইন থেকে প্রায় ২০ফুট দুরে ছিটকে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় নারী শ্রমিক সেফালী বেগম (৪২)।
নিহতরা হলেন, সোনারায় ধনীপাড়া এলাকার আশরাফ আলীর স্ত্রী সেফালী বেগম (৪২), একই এলাকার মোশারফ আলীর স্ত্রী রোমানা বেগম(২৫), আলতাফ হোসেনের স্ত্রী মিনা পারভীন (২২) ও বেলাল হোসেনের স্ত্রী সাহেরা বেগম (৩২।
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের আবাশিক চিকিৎসক ডা. কাজী আব্দুল মোমিন জানান, হাসপাতালে আসা সাতজন রোগীদের মধ্যে সাহেরা বেগম, রোমানা বেগম মারা যায়। ভর্তি পাঁচজনের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যেও মিনা পারভীন মারা যায়। নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন সোনারায় এলাকার ইয়াকুব আলীর ছেলে অহিদুল ইসলাম(২৮), নজরুল ইসলামের স্ত্রী রওশন আরা(২৭) এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন সায়েদ আলীর স্ত্রী কুলসুমা বেগম(৩০) ও গোলাম মোস্তফার স্ত্রী নাসরীন আক্তার (৩৫)।
নীলফামারী ফায়ার স্টেশন ইনচাজ, মো: নিয়ারাজ হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রহমান বিশ^াস বলেন, এ দুর্ঘটনার ব্যাপারে সৈয়দপুর রেলওয়ের পি ডাব্লিউ সুলতান আহমেদ বাদী হয়ে রেল থানায় একটি অপমৃত্য মামলা দায়ের করেছেন। নিহতদের স্বজনদের আবেদনের ভিত্তিতে ময়না তদন্ত ছাড়াই তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নীলফামারীর সোনারায় ধনীপাড়ার দুর্ঘটনায় নিহত সেফালী বেগমের স্বামী আশরাফ আলী বলেন, আমি গরীব পরিবারের সন্তান। আমার স্ত্রী উত্তরা ইপিজেড’র একটি কোম্পানীতে চাকুরী করে যা পায় তা দিয়ে চলে সংশার। সে মারা যাওয়ায় আমার পরিবারটি পথে বসলো।
একই এলাকার মৃত মিনা পারভীনের স্বামী আলতাফ হোসেন বলেন, আমাদের সংশারে একটি মাত্র পুত্র সন্তান। তার বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর। বউতো দুর্ঘটনায় মারা গেল। আমার সংশারের আয়ের সব পথ বন্ধ হয়ে গেল। এই বাচ্চাকে নিয়ে আমি কী করবো। অবুজ ছেলে সারাক্ষন মা মা করে কান্নাকাটি করছে। তাকে থামানো যাচ্ছে না। আমি এখন চোখে অন্ধকার দেখছি।
মৃত সাহেরা বেগমের স্বামী বেলাল হোসেন বলেন, দারোয়ানী স্টেশন সংলগ্ন এই রেলক্রসিং দিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন ও মানুষ পারাপার হয়। বিশেষ করে সকাল ও সন্ধ্যায় ইপিজেড’এ নারী শ্রমিক নিয়ে যাতায়াতকারী শত শত অটোবাইক চলাচল করে। কোনদিন কোন দূর্ঘটনা হয়নি। আজকের এই দূর্ঘটনা আমাদের সুখের সংশারকে ভেঙ্গে ঠুকরো টুকরো করে দিল। আমরা এ রেলক্রসিংএ গেট ও গেটম্যান দেয়ার জন্য অনেক দাবী জানাইছি। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ কোন কথাই শুনেননি। তাদের অবহেলার জন্য আজ অকালে মারা গেল তারা।
উল্লেখ্য, এর আগে গত বছরের আট ডিসেম্বর পাশর্^বর্তী কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের বউ বাজারে অরক্ষিত রেল ক্রসিংএ একই পরিবারের তিন শিশুসহ চারজন নিহত হয়। সৈয়দপুর চিলাহাটী ৫২কিলোমিটার রেলপথে ৩৬টি রেল ক্রসিং এর মধ্যে তিনটি অবৈধ ও ২১টি অরক্ষিত। এসব রেলপথে গেট ও গ্যাটম্যান না থাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। অকালেই ঝড়ছে তরতাজা প্রাণ।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button