রংপুর বিভাগ

হুমকির মুখে রৌমারী: অবৈধ ড্রেজারে খাচ্ছে চর

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ৬টি নদ-নদীতে দোর্দন্ড দাপটে ৬৮টি অবৈধ ড্রেজার চলছে এখন। সে বালু বহনকারী ট্রাক্টর চাপায় নুর জাহান নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিতভাবে চালানো এসব ড্রেজারে ধ্বংস হচ্ছে চর, নদী ও জীববৈচিত্র। নদীর স্বাভবিক গতি খর্ব হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে নদী তীরবর্তী শতাধিক গ্রাম। সাথে ভুমি ধ্বসেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নদী খননের নামে ব্রহ্মপুত্রের ফুলুয়ারচর এলাকায় ড্রেজার বসিয়ে ৩ মাস ধরে রেকর্ডকৃত জমি থেকে বালু উত্তোলন করছে বিআইডব্লিউটিএ। উত্তোলিত বালু ট্রাক্টরের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রথম দিকে এলাকাবাসী এ খনন কাজে বাধা দেন। এতে কোনো সুরাহা না হলে হাই কোর্টে একটি রিট করেন এলাকাবাসী। এতে ৭ সপ্তাহের জন্য খনন কাজের স্থগিতাদেশ দেন আদালত। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষ হলে আবার খনন কাজ শুরু হয়।
ওই এলাকার সাবেক সেনা সদস্য নূরুল হক বলেন, ব্রহ্মপুত্রের ওই এলাকায় ৩ বছর ধরে একটু একটু করে চর জেগে উঠলে আমরা আশায় বুক বাধতে থাকি। এবার বন্যার পর প্রায় ১ হাজার একর জমি দৃশ্যমান হয়। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ নদী খননের নামে আমাদের রেকর্ডকৃত জমিতে একটি বিশাল ড্রেজার বসিয়ে যেভাবে বালু তুলছে, তাতে আগামিতে এ চরগুলো আর থাকবে না। আশপাশের চরগুলো এখনই ভাঙতে শুরু করেছে। শুধু চর নয়; হুমকির মুখে পড়েছে পুরো রৌমারী উপজেলা।
আফজাল হোসেন নামের এক বৃদ্ধ বলেন, নদী থেকে বালু তুলে শতাধিক ট্রাক্টর দিয়ে সে বালু বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একদিকে বালু উত্তোলন করে রাস্তা ও জমিগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে অন্যদিকে ট্রাক্টরের ভয়ঙ্কর ছোটাছুটিতে রাস্তা দিয়ে চলাচল করাই দুস্কর হয়ে পড়েছে আমাদের। পাশাপাশি ট্রাক্টরের ধুলোয় এলাকার শিশু ও বৃদ্ধরা শ^াসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
ব্রহ্মপুত্রের সাহেবের আলগা এলাকায় বাল্কহেড দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন মোগল নামের এক বালু ব্যবসায়ী। আব্দুল করিম মাস্টার, মোস্তাফিজুরসহ সেখানকার শতাধিক গ্রামবাসী বাল্কহেড বন্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কাজ হচ্ছে না। যাদুরচর নৌ ঘাটে সুরুজ্জামাল নামের এক বালু ব্যবসায়ী অন্তত ১০টি ড্রেজার বসিয়েছেন। সেখানে সোনাভরি নদীর স্বাভাবিক গতি বন্ধ করে ট্রাক্টর চলাচলের রাস্তা নির্মাণ করেছেন তারা। চরধনতলা এলাকার হলহলিয়া নদীতে ড্রেজার বসিয়ে সেলিম ও আবু সাঈদ নামের দু’জন বালু ব্যবসায়ী দেদার বালু ব্যবসা করছেন।
এছাড়াও বাগের হাট এলাকার আবুল কালাম ও মজিবর রহমান, হাফিজুর রহমান, গবরাগ্রামের আলতাফ হোসেন, বাগুয়ারচরে আতোয়ার হোসেন ও জিয়াউর রহমান, পাখিউড়াতে মেম্বার আবুল কালাম, জাহিদুল ইসলাম, মোন্নাফ আলী, কাউনিয়ারচরে ফারুক হোসেন, মুকুল মিয়া, আমজাদ হোসেন, দুলাল, কাজাইকাটায় জাহিদুল ইসলাম, বদ্দি মিয়া, সহিজল, ইটালুকান্দায় মন্টু মিয়া, আমবাড়ীতে আক্তার হোসেন, চরবোয়ালমারীতে নবাব মন্ডল, চরধনতলায় তারা মিয়া, দক্ষিণটাপুরচরে বাবলু মিয়াসহ অনেক এলাকার খাল ও নদীতে ড্রেজার চালানো হচ্ছে। একইভাবে জিঞ্জিরাম নদী, সোনাভরি নদী, ধরনী নদী ও জালচিরা নদী থেকেও তোলা হচ্ছে বালু। বালু সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালি যে, এদের নিকট প্রশাসনও যেন অসহায়।
নদী খননের নামে ড্রেজিং ও বালু ব্যবসার বিষয় কথা বলার জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ’র (বিআইব্লিউটিএ) ড্রেজিং বিভাগের প্রকৌশলী আব্দুল মতিনের সঙ্গে ০১৫৫১২২৯৯৭৭ ও ০১৯৬৮৩৯০০০৭ এ দুটি নম্বরে বহুবার ফোন করেও তিনি সারা দেননি। তবে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, এর আগে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি, শুনতে পাচ্ছি আবারও ড্রেজারগুলো সচল হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে আবারও সেগুলো ভেঙ্গে দেয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button