জাতীয়রাজনীতি

আইন মেনেই খুনিদের ফিরিয়ে আনব : মোমেন

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী পলাতক খুনিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি অনেকদূর এগিয়েছে। পলাতক খুনি নূর চৌধুরীকেও ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কানাডা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। পলাতক বাকি তিন খুনিকেও আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ আইন ভিন্ন অন্য কোনো উপায় অবলম্বন করবে না।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত পাঁচ খুনিকে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় বস্তবায়ন প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সময়ের আলোকে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘খুনি রাশেদ চৌধুরী মিথ্যা তথ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবগত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে আমাদের প্রতিনিয়ত যোগাযোগ হচ্ছে। সেখানকার আদালতে এখন রিভিউ চলছে। আশা করছি তাকে ফিরিয়ে আনতে পারব।’

কানাডায় অবস্থান করা খুনি নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে ফিরিয়ে আনার জন্যও আমরা ওই দেশের আদালতে আইনি প্রক্রিয়ার সঙ্গে লড়ছি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহযোগিতা চেয়েছেন।’

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনির মধ্যে এখনও পলাতক তিন খুনির অবস্থান জানা যায়নি। তারা হলেন- খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম ও মোসলেহ উদ্দিন।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিন খুনি কোথায় লুকিয়ে আছে এখন পর্যন্ত সে তথ্য উদ্ধার করা যায়নি। এদের তথ্য কেউ দিতে পারে না। এটা লজ্জার বিষয় যে, আমাদের দেশের এত বাঙালি, তাদের আত্মীয়-স্বজন আছে, তারা কেউ এসে পলাতক তিন খুনির বিষয়ে তথ্য দেয় না। পলাতক এই খুনির বিষয়ে কেউ তথ্য দিলে পুরস্কৃত করা হবে। সবাইকে আহ্বান করছি, এই খুনিদের বিষয়ে তথ্য থাকলে আমাদের জানান।’

তিন খুনির অবস্থান জানতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, জানত চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, আইন মন্ত্রণালয় এবং সরকারের সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ এজেন্সি একসঙ্গে কাজ করছে। বিভিন্ন উপায়ে তাদের অবস্থান বের করার চেষ্টা করছি।’

এ বিষয়ে আমাদের গোয়েন্দারা সফল হতে পারছেন না কেন, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও বিশ্বাসী। অনেক দেশে ভিন্নভাবে অনেক কিছু হয়। যেমন ইসরাইল যুদ্ধাপরাধীদের হঠাৎ করেই উঠিয়ে নিয়ে আসে। অনেকেরই প্রশ্ন যে, আমরা কেন এভাবে পারি না। এর কারণ হচ্ছে যে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা এবং আইন মেনে চলা। তাই আমরা আইনের বাইরে যেতে চাই না। আমাদের অনেক সময় লাগছে এবং কষ্ট হচ্ছে কিন্তু আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই খুনিদের দেশে এনে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করব। আমরা আইনের বাইরে যেতে চাই না। যেমন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ক্যাঙ্গারু কোর্টে বিচার করা যেত; কিন্তু আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সম্মান দেখাই বলেই আদালতের সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি।’

প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে একদল বিপথগামী সেনাসদস্য। ওই সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের বিচারে পদে পদে বাধা আসে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপরই দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বাতিল করে জড়িত খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনি খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ও এএম রাশেদ চৌধুরী এখনও পলাতক।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button