অর্থনীতি

কৃষি ও ক্ষুদ্রঋণ: বিতরণের চেয়ে আদায় বেশি

ক্ষুদ্র ও কৃষিঋণ বিতরণের চেয়ে আদায়ের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে গ্রামের দরিদ্র মানুষের কাছে টাকার প্রবাহ কমছে। পাশাপাশি আগের বিতরণ করা ঋণের টাকা বেশি আদায় হওয়ায় তাদের কাছ থেকে টাকা চলে আসছে ব্যাংকে।

চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে কৃষিঋণ আদায় হয়েছে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

গত অর্থবছরের একই সময়ে আদায় হয়েছিল ১ হাজার ৫৪৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ১২ দশমিক ৪১ শতাংশ কম আদায় হয়েছে। জুলাইয়ে ঋণ বিতরণের চেয়ে ৩৭৬ কোটি ৩ লাখ টাকা বেশি আদায় হয়েছে। ফলে কৃষকদের কাছ থেকে ওই পরিমাণ অর্থ চলে এসেছে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কৃষিঋণ ও ক্ষুদ্রঋণ বাবদ যে অর্থ আদায় হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি অর্থ ওই খাতে বিতরণ করলে গ্রামে টাকার প্রবাহ বাড়বে। টাকার প্রবাহ বাড়লে গ্রামে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে। মানুষের আয় বাড়বে। কৃষি খাতে উৎপাদন বাড়লে কৃষক যেমন উপকৃত হয়, তেমনি সরকারও চাপমুক্ত থাকে। এতে খাদ্য আমদানির চাপ কমে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার ওপরও চাপ কম পড়ে। উৎপাদন বাড়ার কারণে পণ্য বিক্রি থেকে আয়ে গ্রামে টাকার প্রবাহ বাড়ে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে ছিল ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু প্রথম মাসেই বিতরণ কম হয়েছে।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৃষিঋণ বিতরণ সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, কৃষকদের মধ্যে ঋণের চাহিদা কম থাকায় বিতরণ কম হয়েছে। এখন তদারকি বাড়ানো হয়েছে। কৃষিঋণ বিতরণ বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক ঋণ বিতরণ করতে পারছে না। এদিকে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কৃষি ব্যাংককে ইতিমধ্যে স্বল্প মেয়াদে ১ হাজার কোটি টাকা পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা দেয়া হয়েছে। ওই অর্থে কৃষি ব্যাংক এখন ঋণ বিতরণ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এখন পর্যন্ত পুনঃঅর্থায়ন বাবদ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে দেয়া অর্থের মধ্যে ৩ হাজার ২৯০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে।

এদিকে বর্গাচাষীদের মধ্যে বিতরণের জন্য বিশেষ কৃষিঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক ৬০০ কোটি টাকার একটি ঘূর্ণায়মান তহবিল (ঋণ বিতরণ করে সুদসহ আদায় করে ওই অর্থ আবার বিতরণ করা) দিয়েছিল এনজিও ব্র্যাককে। ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত এ বিশেষ কর্মসূচি চলে। এর আওতায় ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৬২৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। গত জুনে এ কর্মসূচি শেষ হয়েছে।

গ্রামীণ ব্যাংকসহ বড় নয়টি এনজিও জুলাইয়ে ১০ হাজার ২২৮ কোটি ১০ লাখ টাকার ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করেছে। একই সময়ে তারা আদায় করেছে ১০ হাজার ৪৪৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ওই মাসে তারা বিতরণের চেয়ে ২১৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বেশি আদায় করেছে। ফলে ওই পরিমাণ টাকা গ্রাম থেকে চলে এসেছে।

বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডকে (বিআরডিবি) ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের জন্য চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ৮৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাইয়ে তারা নিজস্ব উৎস থেকে পাওয়া তহবিলের মাধ্যমে বিতরণ করেছে ৭৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আদায় করেছে ৮৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বিতরণের চেয়ে তারা ৮ কোটি ৪ লাখ টাকা বেশি আদায় করেছে।

বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংককে চলতি অর্থবছরে ২২ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে জুলাইয়ে তারা কোনো ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। তবে আদায় করেছে ৩৪ লাখ টাকা।

তবে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আদায়ের চেয়ে বেশি বিতরণ করেছে। তারা ২৭৮টি এনজিওকে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের জন্য ৩২৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা দিয়েছে। এর বিপরীতে আদায় করেছে ২৬৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ থেকে দেখা যায়, দেশের মোট শ্রম শক্তির মধ্যে কৃষি খাতে নিয়োজিত রয়েছে ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থাৎ এককভাবে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক এ খাতে কর্মরত। এদের একটি বড় অংশ সব সময় কাজ পায় না। এ কারণে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, কৃষি খাতে ভর্তুকি ও ঋণের জোগান বেশি দেয়া হলে, একদিকে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, অন্যদিকে বৃদ্ধি পাবে উৎপাদন। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button