এই দুঃসময়ে করণীয়

ঈদের ছুটি শেষ। ঘুরমুখো অসংখ্য মানুষ কর্মক্ষেত্রে ফেরেনি। গার্মেন্টস বন্ধ। কল-কারখানা বন্ধ। জরুরি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানই বন্ধ। লকডাউনের কারণে মানুষ ঈদের ছুটিসহ ১৪ দিন আটকা পড়েছে গ্রামে। ঈদের পরদিন জরুরি সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা ফিরে এসেছেন। শহরগুলোয় এখন অনেকটাই সুনসান। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। জ্যাম নেই, বায়ু ও শব্দদূষণ নেই। কোলাহলমুক্ত এ এক অচেনা শহর।
সরকার ঈদ উপলক্ষে লকডাউন শিথিল করেছিল। অসংখ্য মানুষ করোনা ভাইরাসের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে গ্রামে ফিরেছে। এই দলে করোনা রোগীরাও ছিল। এ ছাড়া আগে থেকেই খুলনা, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, বরিশালসহ অধিকাংশ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। মানুষ সাধারণ ঠা-া-জ¦র মনে করে পরীক্ষায় অনীহা প্রকাশ করছে। এখন করোনা শনাক্ত রোগীর চেয়ে করোনা উপসর্গে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তি নিয়ম-কানুন না মানায় পরিবারের একজন থেকে অন্যজনে ছাড়াচ্ছে। গ্রামে মাস্কের কোনো বালাই নেই। অনেকে আবার করোনা আছে বলে বিশ^াস পর্যন্ত করে না। অনেকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে মরণঘাতী করোনাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে।
লকডাউন শিথিলতার কারণে ঘরমুখী মানুষের মধ্যে করোনার বিধিনিষেধ উপেক্ষা করতে দেখা গেছে। কেউ মাস্ক পরেছেন, কেউ পরেননি, কেউ আবার থুতনিতে ঝুলিয়ে রেখেছেন। বাসের এক সিটে দুইজন বসেছেন, লঞ্চ ও ফেরিতে গাদাগাদি করে গেছেন গ্রামে। ঘরমুখী মানুষের কাছে ঘরে ফেরাই ছিল মুখ্য, করোনা নয়। এদিকে অসংখ্য মানুষ গ্রামে ফেরায় কেউ স্থানীয়ভাবে আবার কেউ নিজে অন্যকে করোনায় সংক্রামিত করছেন। আগামী দুই-তিন সপ্তাহ করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। আর ওই দুঃসময় মোকাবিলার প্রস্তুতি থাকতে হবে আমাদের হাসপাতালগুলোকে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা হাসপাতালগুলোয় রাতারাতি বড় কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। ইতোমধ্যেই আমরা দেখছি দেশে আইসিইউয়ের চরম সংকট, বেড ও অক্সিজেনের সংকট চলছে। অক্সিজেনের জন্য যাতে কোনো রোগীর প্রাণসংশয় না হয়, এ জন্য সম্প্রতি ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি করা হচ্ছে। করোনা রোগীদের জন্য নতুন নতুন অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতের সামর্থ্য অনুযায়ী সব ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হচ্ছে। এর পরও অনেক ফাঁকফোকর দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের গলদ বেরিয়ে আসছে।
শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনার চিকিৎসাব্যবস্থা থাকলে গ্রামে ততটা সুযোগ-সুবিধা নেই। অক্সিজেন, আইসিইউ ও বেডের অভাবসহ নানা জটিলতায় গ্রামের হাসপাতালগুলোই অসুস্থ। তাই করোনা চিকিৎসায় গ্রামের মানুষ শহরে ছুটছে। অনেক রোগীর পরিবার আছে- যাদের শহরগুলোতেও আসার সামর্থ্য নেই। তাদের ভাগ্য আল্লাহই নির্ধারণ করছেন। আবার উন্নত চিকিৎসার জন্য শহরগুলোয় এলেও বেডের অভাবে ভর্তি হতে পারছেন না অনেকে। ফলে ঘটছে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু।
উল্লেখ্য, করোনা চিকিৎসায় বেসরকারি হাসপাতালগুলো রোগীর কাছ থেকে এতটাই মুনাফা করছে যে, ‘সেবা’ নামক শব্দটি সেখানে বেমানান। মানুষের এই দুঃসময় বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ভূমিকা সত্যিই লজ্জাজনক।
ঈদের পর আবার লকডাউন শুরু হয়েছে। মানুষের ভেতরে এখনো উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। মহল্লাগুলোয় অনেক দোকান খোলা রয়েছে। নির্ধারিত সময় পর্যন্ত কাঁচাবাজার খোলা থাকার কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই সেটি মানা হচ্ছে না। অটোরিকশা, রিকশা ও প্রাইভেটকার চলছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জরিমানা করছে। বাইরে বের হওয়া মানুষ নানা অজুহাত দেখাচ্ছে। তারা একবারও ভেবে দেখছেন না, নিজেই নিজের সর্বনাশ ডেকে আনছেন।
সময় বড় দুঃসময়ের মুখোমুখি। সবার কাছে বিনীত অনুরোধ, ঘরে থাকুন। আপনি ঘরে থাকলে সংক্রমণ কমবে, আপনার পরিবার ভালো থাকবে, আপনার মহল্লা ভালো থাকবে, আপনার জেলা ভালো থাকবে। আপনি ভালো থাকলে দেশ ভালো থাকবে, বিশ^ ভালো থাকবে। প্লিজ, এই লকডাউনে ঘরে থাকুন।