জাতীয়

কঠোর লকডাউন ঘোষণার পরই বাজারে বেড়েছে ক্রেতার চাপ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় আগামী সোমবার (২৮ জুন) থেকে সারাদেশে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন দিয়েছে সরকার। এই সংবাদে বাড়তি কেনাকাটা করতে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ও দোকানে ভিড় করছেন ক্রেতারা।

দোকানে দোকানে ভিড় করে ক্রেতারা চাল, ডাল, মাংস, মাছ, পেঁয়াজ, আলু, রসুন, আদাসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বাড়তি পরিমাণে কিনতে দেখা গেছে।

বিক্রেতার জানিয়েছেন, প্রতি শুক্রবারই বাজারে ক্রেতাদের বাড়তি চাপ থাকে। আর শনিবার তুলনামূলক কম ক্রেতা আসেন। কিন্তু শুক্রবার রাতেই এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউনের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ায় শনিবার (২৬ জুন) সকাল থেকেই ক্রেতারা বাজারে ভিড় করে বাড়তি পণ্য কেনা শুরু করেছেন।

তারা আরও জানিয়েছেন, এবারের কঠোর লকডাউন অন্যবারের থেকে কড়াকড়ি হবে, এমন গুঞ্জন সবখানেই রয়েছে। এমনও গুঞ্জন রয়েছে এই কঠোর লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়তে পারে। এ কারণেই হয়তো ক্রেতারা বাড়তি পণ্য কিনছেন।

এদিকে কোরবানির ঈদের সময়ও এগিয়ে আসছে। ঈদ কেন্দ্রীক কিছু পণ্যের দাম ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে। এখন কঠোর লকডাউনের সংবাদে ক্রেতারা যেভাবে বাড়তি পণ্য কেনা শুরু করেছেন, তাতে সামনে কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে।

মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. আফজাল বলেন, ‘প্রতি শুক্রবারই ক্রেতাদের বাড়তি চাপ থাকে। গতকালও তার ব্যতিক্রম ছিল না। তবে শনিবার সাধারণত ক্রেতা কম থাকে, কিন্তু লকডাউনের খবরে আজ ক্রেতাদের বেশ চাপ দেখা যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে চাল ও চিনির দাম কিছুটা বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে যে চাল ৫৬ টাকা কেজি বিক্রি করেছি, এখন সেই চালের কেজি ৬০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। সব ধরনের চালের দাম গত দুই-তিনদিনে কেজিতে ২-৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।’

মালিবাগ হাজীপাড়া বৌ-বাজারের ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘কঠোর লকডাউনের খবরে আজ সকাল থেকে ক্রেতাদের বেশ চাপ রয়েছে। ক্রেতারা আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন বাড়তি পরিমাণে কিনছেন। এসব পণ্য আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। তবে ক্রেতারা যেভাবে কিনছেন, দুই-একদিনের মধ্যে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে।’

মধ্য বাড্ডার ব্যবসায়ী আরিফুর ইসলাম বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই দেশজুড়ে শাটডাউনের গুঞ্জন রয়েছে। তবে গতকাল সবাই স্পষ্ট হয়েছে শাটডাউন না কঠোর লকডাউন দেয়া হবে। আর এবারের লকডাউন অন্যবারের তুলনায় কড়াকড়ি হবে। এই লকডাউনে সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে বলেও সংবাদ বেরিয়েছে। সুতরাং এবার বিনা প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়া যাবে না, সবার মধ্যেই এমন ধারণা জন্মেছে। এ কারণেই হয়তো ক্রেতারা কিছু পণ্য বেশি পরিমাণে কিনে রাখছেন।’

রামপুরা বাজার থেকে বাড়তি পণ্য কেনা মামুন বিশ্বাস বলেন, ‘সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী এবারের কঠোর লকডাউনে সবকিছু বন্ধ থাকবে। সরকারি-বেসরকরি কোনো অফিস খোলা থাকবে না। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে এবার খুবই কড়াকড়ি হবে। এ কারণে পেঁয়াজ, আলু, ডালসহ কিছু পণ্য বাড়তি পরিমাণে কিনে রাখছি। বলা তো যায় না সামনে কী হবে।’

এদিকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন শুক্রবার (২৫ জুন) রাতে  বলেন, ‘২৮ জুন থেকে সাতদিনের কঠোর বিধিনিষেধ থাকবে। পরে প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে। এটা যাতে সবাই কঠোরভাবে প্রতিপালন করে সেজন্য বেশ কড়াকড়ি থাকবে। সেজন্য পুলিশ থাকবে, বিজিবি থাকবে, সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ অপ্রয়োজনে বাইরে আসবে না। অফিস বন্ধ থাকবে। ৩০ জুন বাজেট পাসের বিষয় আছে, এ সংক্রান্ত যে কার্যক্রম আছে, এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) রিলেটেড, হিসাব রিলেটেড কাজটুকু করার জন্য স্বল্প পরিসরে অফিস খোলা থাকবে। এ ছাড়া সব বন্ধ থাকবে।’

ফরহাদ হোসেন আরও বলেন, ‘জরুরি সেবা দেয়ার কাজে ব্যবহৃত যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহন বন্ধ থাকবে। তবে সাংবাদিকদের গাড়ি ও ইন্টারনেট সেবা দেয়ার কাজে ব্যবহৃত যানবাহনও চলবে।’

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button