জাতীয়
জয়যাত্রা টিভিতে প্রতিনিধি হলেই গুণতে হয় টাকা
আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীরের দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তারা হলেন- হাজেরা খাতুন (৪০) ও সানাউল্ল্যাহ নূরী (৪৭)। গতকাল মঙ্গলবার গাবতলী থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। র্যাব জানায়, তারা হেলেনাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করত। র্যাব আরও জানায়, হেলেনার জয়যাত্রা টিভিতে প্রতিনিধি হতে চাইলে ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা গুণতে হতো।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মিডিয়া বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব জানান। অন্যদিকে হেলেনাকে চার মামলায় ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
জয়যাত্রা টিভিতে প্রতিনিধি হলেই গুনতে হয় টাকা : কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, বিশে^র ৩৪টি দেশে ও দেশের ভেতরে ৫০টি জেলায় এই আইপি টিভির সম্প্রচার চলত। দেশের গুরুত্ব বিবেচনায় ১ থেকে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রতিনিধিরা নিয়োগ দেওয়া হতো এবং প্রতি মাসে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হতো চ্যানেলটিকে। অন্যদিকে জেলা প্রতিনিধি ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, উপজেলা প্রতিনিধি ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা এককালীন প্রদান করতে হতো এবং প্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হতো।
তিনি বলেন, হংকংয়ের একটি ডাউনলিংক চ্যানেল হিসেবে সম্প্রচার হয়ে আসছিল। যার ফ্রিকুয়েন্সি হংকং থেকে বরাদ্দ করা হয়। ফ্রিকুয়েন্সির জন্য হংকংকে প্রতি মাসে প্রায় ৬ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হতো। হংকং থেকে বরাদ্দ ফ্রিকুয়েন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশে সম্প্রচারের কোনো বৈধ অনুমোদন নেই।
কে এই হাজেরা : গ্রেফতারকৃত হাজেরা খাতুন ২০০৯ সালে কুমিল্লার একটি কলেজ হতে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। পরে হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন মিরপুরে একটি গার্মেন্টস অ্যাডমিন (এইচআর) পদে চাকরি শুরু করেন। তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের নিকটাত্মীয় এবং একই সঙ্গে কর্মদক্ষতা গুণে হেলেনা জাহাঙ্গীরের অত্যন্ত আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। ২০১৬ সালে তিনি ১জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন’-এর ডিজিএম হিসেবে নিযুক্তি পান। ‘জয়যাত্রা টিভি’ প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে জিএম (অ্যাডমিন) পদে নিযুক্ত হন। হাজেরা খাতুন মূলত দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ হেলেনা জাহাঙ্গীরের আর্থিক বিষয়াদি দেখভাল করতেন।
হাজেরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ফাউন্ডেশনে ডোনার, জেনারেল মেম্বার, লাইফ টাইম মেম্বার ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এই সংগঠনের প্রায় ২০০ জন সদস্য রয়েছে। যাদের কাছ থেকে সদস্যপদ বাবদ ২০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে।
সানাউল্ল্যা নূরী যা জানিয়েছে : র্যাব জানায়, জয়যাত্রা টিভির প্রতিনিধি সমন্বয়ক ছিল সানাউল্ল্যা নুরী । তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের নির্দেশনায় প্রতিনিধিদের সমন্বয় সাধন করতেন। প্রতিনিধিদের কেউ মাসিক টাকা দিতে ব্যর্থ হলে বা গড়িমসি করলে তিনি ভয়ভীতি প্রদর্শন করতেন। এলাকাতে তার নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। তিনি গাজীপুর গার্মেন্টস সেক্টরে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে তার একটি অংশও জয়যাত্রা টিভিতে প্রদান করতেন বলে জানান। এ ছাড়াও তিনি গাজীপুর ও তৎসংলগ্ন এলাকার অনুমোদনহীন জয়যাত্রা টিভির সম্প্রচার নিশ্চিত করতেন।
১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হেলেনার : এদিকে হেলেনাকে চার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে গুলশান থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় রিমান্ড শেষে হাজির করা হয়। এ সময় এ মামলায় পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার ওসি (অপারেশন) শেখ শাহানুর রহমান। এ ছাড়া গত ৩১ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে পল্লবী থানার প্রতারণার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ইয়ামিন কবির টেলিযোগাযোগ আইনে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। তা ছাড়া একই দিনে মিরপুর থানার প্রতারণার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। অপরদিকে গুলশান থানার মাদক মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসি ডিজিটাল নিরাপত্তা এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের দুই মামলায় তিন দিন করে ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ ছাড়া অপর মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান শুনানি শেষে প্রতারণা ও টেলিযোগাযোগ আইনের দুই মামলায় চার দিন করে আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ৩০ জুলাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় হেলেনা জাহাঙ্গীরের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।