আইন-আদালতজাতীয়

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে অনেক দুর্বল দিক রয়েছে: মতামত তামাকবিরোধী সংগঠনের

বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে অনেক দুর্বল দিক রয়েছে যার কারণে আইন শতভাগ বাস্তবায়িত হচ্ছে না হোটেল-রেস্তোরাঁয়।

মঙ্গলবার এভিয়েশন ও ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ এবং ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের যৌথ উদ্যোগে “ঢাকা শহরের রেস্তোরাঁয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের চিত্র পর্যবেক্ষণ জরিপের ফলাফল ও গণমাধ্যমের ভূমিকা” শীর্ষক এক অনলাইন আলোচনা সভায় উপস্থিত বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধি বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বাস্তবায়ন ও এর দুর্বল দিক নিয়ে মতামত প্রকাশ করেন।

সভায় অংশ নেন ফোরামের সদস্যবৃন্দ ও বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ।

সভা পরিচালনা করেন ও সভার উদ্দেশ্য তুলে ধরেন এভিয়েশন ও ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের সভাপতি ও এটিএন বাংলার বার্তা সম্পাদক নাদিরা কিরণ।

তিনি বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রনয়ণ, বাস্তবায়ন ও সংশোধনে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর হোটেল, রেস্তোরাঁ, পর্যটন কেন্দ্র এগুলো বিনোদনের জন্য এবং এসকল স্থানে জনসমাগমও বেশি। তাই এসকল সেক্টরকে তামাকমুক্ত রাখা প্রয়োজন। তামাকমুক্ত রাখতে জনসচেতনা বৃদ্ধি ও আইন বাস্তবায়নে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষনে গণমাধ্যম অতিতেও কাজ করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও সক্রিয় হয়ে কাজ করবে।

সভায় জরিপের ফলাফল তুলে ধরে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সহকারী পরিচালক ও তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. মোখলেছুর রহমান।

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন কর্তৃক জুন’২০১৯-এ ‘ঢাকা শহরের রেস্তোরাঁয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা’ যাচাইয়ের জন্য জরিপটি পরিচালিত হয়। এই জরিপের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা শহরের রেস্তোরাঁয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থার পর্যবেক্ষণ ও আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সরকার, প্রশাসন, রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ, মালিক সমিতি, গণমাধ্যমসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের কাছে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রতিপালনের প্রমাণভিত্তিক তথ্য সরবরাহ করা।

জরিপটি পরিচালিত হয় ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার মোট ৩৭১টি (উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ২১১টি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৬৬টি) রেস্তোরাঁয়। যার মধ্যে ২৪৫টি রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স আছে আর বাকী ১২৬টি রেস্তোরাঁর কোনো ট্রেড লাইসেন্স নেই।

এই ৩৭১টি রেস্তোরাঁর ৯৮%-এ সামগ্রিক ভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন (ধুমপানমুক্ত না রাখা এবং এ সংক্রান্ত নোটিশ প্রদর্শন না করাসহ আইনের অন্যান্য ধারা) লঙ্ঘনের ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে। আরো দেখা গিয়েছে যে ৩৪% রেস্তোরাঁয় ধুমপানের সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যায়, ১৭.৩% রেস্তোরাঁয় সরাসরি ধুমপানের দৃশ্য দেখা যায়; ২৯.৪ % রেস্তোরাঁয় সিগারেটের উচ্ছিষ্ট অংশ/ছাঁই দানি পাওয়া গিয়েছে এবং ২.৬% রেস্তোরাঁয় ধুমপানের গন্ধ পাওয়া গিয়েছে। অন্যদিকে, ৯৮% রেস্তোরাঁয় আইন অনুযায়ী সতর্কতামূলক নোটিশ পাওয়া যায়নি এবং ৯২% রেস্তোরাঁয় কোনো ধরনের সতর্কতামূলক নোটিশ পাওয়া যায়নি। ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় আইন লঙ্ঘনের হার যথাক্রমে ৩৩.২% ও ৩৫.৬%। এছাড়াও আরো দেখা গিয়েছে যে, প্রায় ৪০% ট্রেড লাইসেন্স বিহীন রেস্তোরাঁয় আইন বাস্তবায়িত হচ্ছে না যেখানে প্রায় ৩১% লাইসেন্স প্রাপ্ত রেস্তোরায়ও একই চিত্র উঠে আসে। তবুও লাইসেন্সবিহীন রেস্তোরাঁর থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত রেস্তোরাঁয় আইন বাস্তবায়নের চিত্র কিছুটা হলেও ভাল।

সভায় উপস্থিত এটিজেএফবি এর সদস্যবৃন্দ সকলেই একটি বিষয়ে একমত পোষণ করেন যে বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধন করে হোটেল, রেস্তোরাঁ ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোসহ হসপিটালিটি সেক্টরকে সম্পূর্ণরূপে তামাকমুক্ত রাখা এবং কোন প্রকার ধুমপানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান রাখা নিষিদ্ধ করা। তাহলেই হসপিটালিটি সেক্টর সম্পূর্ণরূপে তামাকমুক্ত হবে। অন্যথায় বর্তমান আইনের দুর্বল দিকগুলোর সুযোগ সকলেই নিবে এবং আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা কঠিন হবে।

সভায় আরও বক্তব্য দেন প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল এসোসিয়েশনের (পাটা বাংলাদেশ চ্যাপটার) চেয়ারম্যান এবং ঢাকা রিজেন্সি হোটেল ও রিসোর্ট এর নির্বাহী পরিচালক শহিদ হামিদ, সাভার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শরফউদ্দিন আহমেদ চৌধূরী, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস্ এর গ্রান্টস ম্যানেজার আব্দুস সালাম মিয়া ও প্রোগ্রাম অফিসার আতাউর রহমান মাসুদ সহ তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button