জাতীয়লিড নিউজ

ফের অনিশ্চয়তা বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে

জিএমইএ ভবনরাজধানীর হাতিরঝিলে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবন ভাঙার বিষয়ে ফের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ভবনটি ভাঙার দায়িত্ব পাওয়া চট্টগ্রামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ বলছে, ১ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ করা সম্ভব হবে না। কারণ, যে অবস্থায় ভবনটি দেখে তারা দরপত্র জমা দিয়েছিল, মালামাল সরিয়ে নেওয়ার ফলে তারা ভবনটি ভাঙার পর মালামাল বিক্রি করে সেই দরপত্রে উল্লেখ করা অর্থ তুলে আনতে পারবে না।
এ বিষয়ে ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার নাছেরুল্লাহ খান রাশেদ বলেন, দরপত্রের নির্ধারিত অর্থ দিয়ে ভবনটি ভাঙা সম্ভব হবে না। এই ভবন ভাঙতে হলে আরও টাকা লাগবে। কারণ, বিজিএমইএ’র লোকজন ভবনের লিফট, জেনারেটরসহ দামি জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) যদি ভবন ভাঙার জন্য আরও অর্থ বরাদ্দ করে তাহলেই কেবল বিজিএমইএ ভবন ভাঙা সম্ভব হবে। এ নিয়ে আজ বুধবার (৬ অক্টোবর) তিনি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হবেন বলেও জানান। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আমাদের বিষয়টি রাজউক চেয়ারম্যান ইতিবাচকভাবে নেবেন। আগামীকাল ফের ভবনটি দেখে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, বুধবার বিজিএমইএ ভবন পরিদর্শন শেষে ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজের কর্মকর্তারা রাজউকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসবে। এদিকে শেষবারের মতো মালামাল সরানো শেষে মঙ্গলবার বিকালে বিজিএমইএ ভবন সিলগালা করে দিয়েছে রাজউক। এর আগে, গত ২১ অক্টোবর রাজউক জানায়, বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ পরবর্তী সপ্তাহে শুরু হবে। সে অনুযায়ী ভবনে থাকা মালামাল সরিয়ে নিতে শেষবারের মতো সময় দেওয়া হয় বিজিএমইএকে। তবে ওই এক সপ্তাহের মধ্যে মালামাল সরিয়ে নিতে না পারায় ফের আবেদন করে বিজিএমইএ। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় পায় তারা।
এদিকে ভবনটি থেকে বিজিএমইএ মালামাল সরিয়ে নিতে শুরু করলে এ প্রক্রিয়ায় আপত্তি জানিয়ে রাজউকের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়েছে ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ। এতে বলা হয়েছে, যে অবস্থায় ভবনটি দেখে তারা দরপত্র জমা দিয়েছিল, মালামাল সরিয়ে নেওয়ার ফলে তারা ভবনটি ভাঙার পর মালামাল বিক্রি করে সেই দরপত্রে উল্লেখ করা অর্থ তুলে আনতে পারবে না। ভবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল সরিয়ে নিয়ে বিজিএমইএ খোলাবাজারে বিক্রি করছে।
রাজউককে লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, মালামাল সরিয়ে নেওয়ার পর তারা ভবনটি ফের পরিদর্শন করবে। এরপর তারা সন্তুষ্ট হলে আগের দরেই ভবনটি ভাঙতে শুরু করবে। অন্যথায় তারা নতুন দর দেবে। তাতে রাজউক রাজি না হলে তারা কাজটি ছেড়ে দেবে। সে ক্ষেত্রে নতুন করে ঠিকাদার খুঁজতে হবে রাজউককে।
এর আগে, গত ১৬ এপ্রিল ভবনটি ভাঙার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। ভবনে থাকা মালামাল সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে ওই দিনই ভবনটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। পরে আবারও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভবনটিতে থেকে যাওয়া মালপত্র সরিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেয় রাজউক।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণে রাজউকের অনুমোদন না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। পত্রিকার প্রতিবেদনটি হাইকোর্ট নজরে নিয়ে ‘ভবনটি কেন ভাঙা হবে না? জানতে চেয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। পরে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলতে রায় দেন। এরপর আপিল ও রিভিউয়ে ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে দফায় দফায় সময় চায় বিজিএমইএ। গত বছরের ৩ এপ্রিল বিজিএমইএকে এক বছরের সময় দেন সর্বোচ্চ আদালত। আদালতের বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হয় এ বছরের ১২ এপ্রিল।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button