জাতীয়রাজনীতিলিড নিউজ

মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তি: দ্বিতীয় ধাপে বিবেচনায় ৬০ হাজার আবেদন

অধিকতর যাচাই-বাছাই শুরু শিগগির * শুনানি নিতে গঠিত হয়েছে ৮ কমিটি

সেখান থেকে ৩৫ হাজার ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) আপিল করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সুপারিশ ও আপিলের ৬০ হাজার আবেদন দ্বিতীয় ধাপে অধিকতর যাচাই-বাছাই করা হবে। এ জন্য প্রতি বিভাগে একটি করে মোট ৮টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। জামুকার সদস্যদের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের এসব কমিটি শিগগির কাজ শুরু করবে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এসব কমিটির সুপারিশ করা আবেদনগুলো অনুমোদনের জন্য জামুকার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। জামুকার সম্মতি মিললেই শুধু এসব মুক্তিযোদ্ধার নামে গেজেট প্রকাশ করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরপর গেজেটভুক্তরা মুক্তিযোদ্ধার সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

জানা গেছে, ৮ আগস্ট জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৬৪তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এতে সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়- উপজেলা/জেলা ও মহানগর যাচাই-বাছাই কমিটি যেসব আবেদনকারীকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুপারিশ করেনি তাদের মধ্য থেকে ৩৫ হাজার ২৮০ জন কমিটির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জামুকায় আপিল করেছেন। এসব আপিল নিষ্পত্তির বিষয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে ৮ বিভাগে একটি করে কমিটি গঠন করা হয়। প্রতি বিভাগে জামুকার একজন সদস্য কমিটির আহ্বায়ক হবেন। জামুকার সদস্য মনোনীত যুদ্ধকালীন কমান্ডার/ভারতীয় তালিকাভুক্ত/লাল মুক্তিবার্তাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে দু’জন কমিটির সদস্য হবেন। কমিটিকে সার্বিক সহায়তা দেবেন জামুকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আগামী অক্টোবরের মধ্যে শুনানির কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব এসএম আরিফ উর রহমান বৃহস্পতিবার বলেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে, তবে কবে নাগাদ শুনানির কাজ শুরু হবে, তা কমিটি সংশ্লিষ্টরা ভালো বলতে পারবেন। তারা সুপারিশ করলে মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট জারিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জামুকা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও চূড়ান্ত হয়নি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান- মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে তৈরি হয়েছে পাঁচটি তালিকা।

এসব তালিকায় সর্বনিম্ন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৭০ হাজার ৮৯৬ জন, সর্বোচ্চ দুই লাখেরও বেশি। ইতিমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেতে নতুন করে এক লাখ ৩৪ হাজার ব্যক্তি আবেদন করেছেন। এসব আবেদন যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা চূড়ান্ত করতে সারা দেশে ৪৭০টি উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করে সরকার। আইনি জটিলতা ও ত্রুটিযুক্ত প্রতিবেদনের কারণে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ষষ্ঠ তালিকা প্রণয়নের কাজও ইতিমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১০টি কমিটি আইনি জটিলতায় এখনও প্রতিবেদন দিতে পারেনি।

এসব উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাকি ৩৬০টি কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলেও তাতে পাওয়া যায় প্রচুর অসঙ্গতি ও ভুলত্রুটি।

জামুকা সূত্র জানায়, যেসব কমিটির সুপারিশ আমলে নেয়া হয়েছে তার মধ্যে সংশ্লিষ্ট যাচাই-বাছাই কমিটি মাত্র ২৫ হাজার ব্যক্তির আবেদন গ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিতে সুপারিশ করে। যা ‘ক’ তালিকা নামে পরিচিত। প্রায় ৪০ হাজার আবেদনের বিষয়ে একমত হতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কমিটি। কমিটির দু-একজন আবেদনকারীকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শনাক্ত করলেও অন্য সদস্যরা একমত হতে পারেননি।

এ ধরনের আবেদনকারীরা ‘খ’ তালিকাভুক্ত। বাকিদের ব্যাপারে কমিটি সিদ্ধান্ত দিয়েছে ‘তারা মুক্তিযোদ্ধা নন’। এ ধরনের আবেদন ‘গ’ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এদের সংখ্যা ‘খ’ তালিকার চেয়ে একটু বেশি। সম্প্রতি ‘খ’ এবং ‘গ’ তালিকাভুক্ত ৩৫ হাজার ২৮০ আবেদনকারী কমিটির সুপারিশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হয়ে জামুকায় আপিল আবেদন করেন। বিষয়টি জামুকার বৈঠকে উপস্থাপন করা হলে ‘ক’ তালিকাভুক্তসহ আপিলকারীদের আবেদন শুনানি গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, মূলত রাজনৈতিক কারণেই মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না। সরকার বদলের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধার তালিকার পরিবর্তন প্রায় নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর এ কারণেই দিন দিন বাড়ছে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা। তবে তালিকা চূড়ান্ত না হলেও এ মুহূর্তে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ ৩১ হাজার ৩৮৫ জন। এর মধ্যে ভাতা পাচ্ছেন এক লাখ ৮৭ হাজার ২৯৩ জন।

তাদের প্রত্যেককে প্রতি মাসে ১২ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা দেয়া হয়। এর বাইরে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারকে মাসে ৩৫ হাজার টাকা, বীরউত্তমদের ২৫ হাজার টাকা, বীরবিক্রমদের ২০ হাজার টাকা, বীরপ্রতীকদের ১৫ হাজার টাকা করে সম্মানী দেয়া হচ্ছে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা এবং শহীদ পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা ভাতা দেয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছর থেকে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন প্রতি ৫ হাজার টাকা হারে মহান বিজয় দিবস ভাতা এবং সব মুক্তিযোদ্ধার অনুকূলে মূল ভাতার ২০ ভাগ হারে বাংলা নববর্ষ ভাতা দেয়া হচ্ছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button