জাতীয়

সমবায়ের নামে প্রতারণা: রূপনগরে গ্রাহকের ৩০ কোটি টাকা লোপাট

সমবায় প্রতিষ্ঠানের নামে রাজধানীর রূপনগরে আড়াই শতাধিক মানুষের কাছ থেকে ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পলাতক ছিলেন সহিদুজ্জামন ওরফে সহিদ ও তার সহযোগীরা। মোটা অঙ্কের লাভের প্রলোভন দেখিয়ে চক্রের সদস্যরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন। এ ক্ষেত্রে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামের একটি সমবায় প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করা হতো।

সমবায় প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা ভঙ্গ করে সহিদের নেতৃত্বাধীন চক্রটি সবুজায়ন প্রকল্প, সঞ্চয় ও বিনিয়োগের কথা বলে টাকা তুলত। ২০০৪ সালে থেকে তারা প্রতারণা শুরু করে। অবশেষে পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) হাতে ধরা পড়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সহিদুজ্জামন ওরফে সহিদ। তিনি এখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। প্রতারণায় জড়িত সন্দেহে ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং ম্যানেজারসহ ৭-৮ জনকে খুঁজছে সিআইডি। তাদের শিগগির গ্রেফতার করা হবে। থানা পুলিশ এবং সিআইডির সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

সিআইডি সূত্র জানায়, চক্রের সদস্যরা মানুষকে এক লাখ টাকা বিনিয়োগে মাসে দুই হাজার টাকার মুনাফা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে টাকা সংগ্রহ করে। শুরুতে কিছু মানুষকে মুনাফা দিয়ে তারা আস্থাও অর্জন করে। পরে গ্রাহকদের লভ্যাংশ দেয়া বন্ধ করে দিয়ে গা ঢাকা দেয়। ওই টাকা দিয়ে চক্রের সদস্যরা ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি তৈরির উদ্যোগ নেন। শনিবার সাতক্ষীরায় অভিযান চালিয়ে চক্রের প্রধান সহিদকে গ্রেফতার করে সিআইডি। রোববার আদালতে হাজির করে তাকে ৬ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানানো হয়।

শুনানি শেষে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় আদালত তাকে তিন দিন জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। এদিকে সহিদ গ্রেফতার হওয়ার পর প্রতারিত মানুষ একে একে হাজির হচ্ছেন সিআইডি কার্যালয়ে। তারা সহিদ চক্রের বিরুদ্ধে টাকা খোয়ানোর নানা অভিযোগ দিচ্ছেন। দু’দিনে অন্তত ২০ জন প্রতারিত মানুষ সিআইডিতে অভিযোগ দিয়েছেন।

রূপনগর থানায় গত দু’দিনে (রবি ও সোমবার) দুটি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রূপনগর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ। তিনি জানান, ফিক্সড ডিপোজিটের নামে ওই সমবায় প্রতিষ্ঠানে ৮ লাখ টাকা জমা দিয়েছিলেন সোহেল রানা নামে এক ব্যক্তি। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও সোহেল টাকা ফেরত পাচ্ছিলেন না। তাই ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গত রোববার তিনি মামলা করেন। ওসি আরও জানান, মুরাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি একই চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার মামলা করেন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানে ১৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। লাভ তো দূরের কথা, তিনি আসল টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, একটি মামলার ডকেট এরই মধ্যে সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্য মামলাটিও সিআইডিতে ন্যস্ত হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, সোহেল নামের একজন ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সহিদকে গ্রেফতার করি। তার অন্য সহযোগীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। নতুন মামলায় সহিদকে শ্যেন এরেস্ট দেখানো হবে উল্লেখ করে সিআইডি কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, সহিদকে গ্রেফতারের পর থেকে তার নেতৃত্বাধীন চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসছে। সব অভিযোগই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে সহিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা তোলার পর তা একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি তৈরির জন্য বিনিয়োগ করা হচ্ছিল। এ কারণে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করা যাচ্ছিল না। সহিদের এই তথ্যটিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে যাচাই করা হচ্ছে উল্লেখ করে বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, এই তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেলে চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে পৃথক মানি লন্ডারিং মামলা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে অবৈধ সম্পদও খতিয়ে দেখা হবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button