জাতীয়

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন ১৬ নভেম্বর: আসছে নতুন নেতৃত্ব তাশরিফা জামান

গত ১৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের সর্বশেষ
সিদ্ধান্ত জানানো হয়, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সম্মেলন আগামী ৬ নভেম্বর সকাল
১১টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথম অধিবেশন এবং ইঞ্জিনিয়ার্স
ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে দ্বিতীয় অধিবেশন, জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলন আগামী
৯ নভেম্বর সকাল প্রথম ও দ্বিতীয় অথিবেশন একই স্থানে। বাংলাদেশ আওয়ামী
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন ১৬ নভেম্বর ও ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী
যুবলীগের সম্মেলন প্রথম ও দ্বিতীয় অধিবেশন একই স্থানে অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়াও আগামী ২৯ নভেম্বর সকাল ১০টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে
আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
দীর্ঘদিন পর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে আওয়ামী লীগের
তিন সহযোগী সংগঠন- আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও
ভ্রাতৃপ্রতিম জাতীয় শ্রমিক লীগে। নতুন কমিটিতে স্থান পেতে বিভিন্ন
পর্যায়ে চলছে পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। তদবির করছেন নীতিনির্ধারকদের কাছে।
যুবলীগের পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেক লীগের সম্মেলন নিয়ে বেশ
আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের
একাধিক দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন, চলমান শুদ্ধি অভিযানের মধ্যে অনুষ্ঠিত
হতে যাওয়া সম্মেলনের মাধ্যমে সৎ যোগ্য ও পরিচ্ছন্ন নেতৃত্বের হাতে
সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ত্যাগী নিবেদিত ও পরিচ্ছন্ন নেতৃত্বের মাধ্যমে এসব সংগঠনের পুরানো
ভাবমূর্তি পূণরুদ্ধারের সূচনা করার চিন্তা নিয়ে কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এজন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজেই এবার এসব সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনের
বিষয়ে সার্বিক খোঁজ খবর নিচ্ছেন। কিছু নেতাকে নিয়ে নতুন করে হিসাব নিকাশ
করা চলছে দলের মধ্যে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ নেতাদের বিষয়ে এরই মধ্যে নানা ধরনের নেতিবাচক
খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার কাছে এই সংগঠনের কিছু নেতার নানা ধরনের কর্মকাণ্ডের তথ্য এসেছে
বলে দলটির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, এবারের সম্মেলনে সংগঠন থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক
লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার ও সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপি।
তাদের স্থলে বর্তমান কমিটি নেতাদের মধ্য থেকে ক্লিন ইমেজের দুই নেতা
দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন।
আগামী ১৬ নভেম্বর শনিবার সকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী
স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সর্বশেষ ২০১২ সালের ১১
জুলাই সংগঠনটির ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে মোল্লা কাওছার সভাপতি এবং পংকজ
দেবনাথ সাধারণ সম্পাদক হন। সম্প্রতি রাজধানীর ক্যাসিনো কারবারে
ওয়ার্ন্ডার্স ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমের
শিরোনামে আসেন মোল্লা কাওছার। সে কারণে তাকে আর স্বেচ্ছাসেবক লীগে রাখা
হবে না এমনটিই ধারণা করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক
পংকজ দেবনাথ এবারও স্বেচ্ছাস্বেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী। তবে তিনি সেই
২০০৩ সাল থেকে সংগঠনটির নেতৃত্বে থাকায় তাকেও এবার অব্যাহতি দেওয়া হবে
বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে এবার আওয়ামী
লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনা হতে পারে বরিশাল-৪ আসনের এই সংসদ সদস্যকে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য
সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা প্রাধান্য পেলেও
স্বেচ্ছাসেক লীগে সংগঠনটির বর্তমান কমিটির নেতাদের মধ্য থেকেই সভাপতি ও
সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। কেননা, সংগঠনটির বর্তমান কেন্দ্রীয়
কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রবীণ ও অভিজ্ঞ নেতৃবৃন্দ রয়েছেন। এবার মূলতঃ
স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন নেতাদেরই নেতৃত্বে আনা হবে।
বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে সভাপতি পদে প্রবীণ নেতাদের থেকে একজনকে
এবং সাধারণ সম্পাদক পদে তরুণ একই সাধে সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন কাউকে
নেতৃত্বে আনা হবে।
সভাপতি পদে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির
বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক নির্মল
রঞ্জন গুহ,  স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মঈন উদ্দীন
মঈন ও  স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আফজালুর রহমান
বাবু।
নির্মল রঞ্জন গুহ স্কুল জীবনে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক দিয়ে
শুরু করে পরবর্তীতে কলেজ, জেলা ও কেন্দ্রীয় ছাত্র রাজনীতিতে দায়িত্ব পালন
করেন। পরবর্তীতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নিজ হাতে গড়া সেবা শান্তি প্রগতির
পতাকাবাহী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা জেলার
আহব্বায়ক, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও পরবর্তী কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি
হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগে দায়িত্ব পালন কালে খালেদা –
নিজামী জোট সরকার বিরোধী আন্দোলনে একাধিক বার জেল জুলুমের স্বীকার হয়েছেন
এই নেতা।
১/১১ এর সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দলোনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের
পক্ষ থেকে পোস্টর, লিফলেট ছাপার মত গুরু দায়িত্বটিও পালন করেন তিনি।
দায়িত্ব পালন কালে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচি সফলতার সাথে পালন
করে নেতা কর্মীদের মাঝে আলোচনায় ছিলেন তিনি।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মঈন উদ্দীন মঈন একই সাথে
বি. বাড়ীয়া আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে
সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন।
সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব গাজী
মেজবাউল হোসেন সাচ্চু। সাচ্চু’র শক্ত প্রতিদন্ধী হিসেবে রয়েছেন
স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান দপ্তর সম্পাদক সালেহ মোহাম্মদ টুটুল। এছাড়াও
স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় চার সাংগঠনিক সম্পাদক নিজেদের প্রার্থী
হিসেবে ঘোষনা দিয়েছেন।
মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন
সাচ্চু এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, ১৯৯৬ সালের অসহযোগ আন্দোলন, ১/১১ তে
জননেত্রী মুক্তি আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি দু’বার কেন্দ্রীয়
ছাত্রলীগের সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে
বৃহত্তর ক্যান্টনমেন্ট থানা সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের আহবায়ক,  বৃহত্তর
ক্যান্টনমেন্ট থানা ছাত্রলীগ দু’বারে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয়ে কলকাতার Peraless Hospital এ ৪৫
দিন চিকিৎসা গ্রহণ করেণ। বারবার কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক
থাকার কারণে স্বেচ্ছাসেবকলীগের সারা দেশের নেতা-কর্মীদের সাথেও রয়েছে ভাল
যোগাযোগ।
সালেহ মোহাম্মদ টুটুল বেচ্ছাসেবকলীগের দফতর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন
করার কারণে সারা দেশের স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতা-কর্মীদের সাথে রয়েছে নিবিড়
যোগাযোগ। স্বেচ্ছাসেবকলীগের কাউন্সিলরদের কাছে তাই অন্যতম প্রিয় নাম
সালেহ মোহাম্মদ টুটুল।
গুডবুকের এই নেতারা গত ১০ বছরের ক্ষমতায় থাকাকালীন কোনো অনিয়ম-দুর্নীতে
জড়াননি। টাকার পেছনে দৌড়াতে গিয়ে ছাত্রজীবনে ধারণ করা আদর্শ বিলিয়ে
দেননি। আদর্শিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ সাবেক ছাত্রলীগার ওই নেতাদের নেতৃত্বে
আনতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আসন্ন সম্মেলন সম্পর্কে নির্মল রঞ্জন গুহ বলেন, আমরা চাই অবশ্যই যারা
নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা রাখে তারাই যেন দায়িত্ব পায়। আমরা চাই দলের
হাইব্রিড নেতারা যেন বিদায় হয়। ওয়ান-ইলেভেনের সময় যারা নির্যাতিত
হয়েছে,যারা ত্যাগ স্বীকার করেছে ,তাদের মূল্যায়ন করা হয়।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমি সাধারণ মানুষ এবং দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে
নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি দল আমার সেই কাজের মূল্যায়ন করবে। নেত্রী
যদি আমাকে আবার সুযোগ দিলে আমি তার প্রমাণ দেবো।
এই বিষয়ে গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু বলেন, যারা রাজপথে থেকেছেন, আন্দোলন
করেছেন, তারা নেতৃত্ব আসুক। এতে সংগঠন যেমন শক্ত হবে; তেমনি জননেত্রী শেখ
হাসিনার হাতও শক্তিশালী হবে।
নতুন নেতৃত্ব সম্পর্কে সালেহ মোহাম্মদ টুটুল বলেন, আমরা চাই ত্যাগী,
স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজের নেতারা নেতৃত্বে আসুক।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button