জাতীয়

১৭ মাস পর খুললো স্কুল-কলেজ : করোনাকালে শিক্ষার ‘উৎসব’

মহামারি করোনার কারণে টানা ১৭ মাস পর খুলেছে স্কুল-কলেজ। আজ রোববার সশরীরে ক্লাসে ফিরছে শিক্ষার্থীরা। চলতি শিক্ষা বছরেরও আট মাস শেষ ইতোমধ্যে। নবম মাসের মাঝামাঝি এসে নতুন শ্রেণিতে প্রথম দিন। কারণ এই বছর নতুন শ্রেণিতে এক দিনও ক্লাস হয়নি। বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। স্কুল-কলেজগুলোতে অনেকটা উৎসবের আমেজ।

সরকারি নির্দেশনা মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, শরীরের তাপমাত্রা ও ওজন মাপার যন্ত্র রাখা হয়েছে। এসব নিয়ম-কানুনে চিরচেনা শ্রেণিকক্ষে অনেক কিছুই বদলে যাচ্ছে। দুই বন্ধু পাশাপাশি বসে ক্লাস করতে পারবে না। জেড আকৃতিতে বসতে হবে শ্রেণিকক্ষে। টিফিন ভাগাভাগি করে খাওয়া যাবে না। সারাক্ষণ পরে থাকতে হবে মাস্ক। স্কুল ক্যান্টিনে মুখরোচক খাবার খেতে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।

শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরতে উন্মুখ। নতুন পোশাক, জুতা আর বই নিয়ে সপ্তাহব্যাপী চলেছে খুশির প্রস্তুতি। তবে এর সঙ্গে আছে অভিভাবকদের উদ্বেগও। উদ্বেগের কারণ- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি আসলে কতটা মানা হবে? অনেকেই দোটানায় আছেন তার সন্তানকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো নিয়ে। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানো বড় ধরনের একটি চ্যালেঞ্জ। কোনোভাবেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে ঢিলেমি করা চলবে না। মনিটরিং জোরদার করতে হবে।

এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর করোনা সংক্রমণ বাড়লে আবার বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শনিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৭ মাস পর রোববার থেকে খোলা হচ্ছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান করলে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা কম। তারপরও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফের বন্ধ করে দেওয়া হবে। কোনো শিক্ষার্থী বা তার পরিবারের কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বা উপসর্গ থাকলে তাদের বিদ্যালয়ে না পাঠানোর অনুরোধও জানান তিনি।

রাজধানীর বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরেজমিন দেখা গেছে উৎসবমুখর পরিবেশ। সরকারি কবি নজরুল কলেজ, ঢাকা গভ. মুসলিম হাই স্কুল, সেন্ট গ্রেগরি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রায়সাহেব বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশমুখে করোনা প্রতিরোধমূলক বুথ, তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র, হাত ধোয়ার বেসিন, হ্যান্ড  স্যানিটাইজার, সাবান ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, একাধিক গেট, ব্যানার, নোটিস এবং সচেতনতামূলক বিভিন্ন ধরনের ফেস্টুন ও ব্যানার দেখা গেছে।

এ সময় কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিভাবকদের গাদাগাদি করে দাঁড়াতে দেখা গেছে। মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি।

করোনা এবং ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষায় অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের আলাদা করে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শ্রেণিকক্ষ, ভবনের কক্ষ, বারান্দা, সিঁড়ি, ছাদ, আঙিনা এবং খেলার মাঠ ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ধুয়েমুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। যদিও দুয়েকটি প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠে ময়লা-আবর্জনা এবং ঘাস কেটে স্তূপ করে ফেলে রাখতে দেখা গেছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফেরা শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে খেলাধুলাসহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ উদ্যোগে ক্লাসে আসা-যাওয়া করবে। তবে গেট থেকে স্কুলের ভেতরে তাদের যাবতীয় সুরক্ষা দায়িত্ব আমাদের। সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের করোনাকালে শ্রেণিকক্ষে ফেরাতে সব ধরনের সহযোগিতা তারা করবেন। অভিভাবকরা বলছেন, দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরতে পারায় তারা একদিকে যেমন আনন্দিত তেমনি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে বেশ উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। তবে দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাঁধভাঙা আনন্দ দেখা গেছে।

বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধনঞ্জয় কুমার সেন বলেন, কোমলমতি শিশুরা দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরছে। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ মনকে চাঙ্গা রাখতে আলাদা রুমে খেলাধুলাসহ বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সেন্ট্রাল গার্লস স্কুলের এক ছাত্রীর বাবা ফয়জুর রহমান জুয়েল বলেন, লম্বা সময় পরে স্কুল খুলছে। করোনায় এখনও মানুষ মারা যাচ্ছে। এই সময়ে সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে কিছুটা দোটানায় আছি।

রায়সাহেব বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিউলি রানী পাল চৌধুরী বলেন, শিশুদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অভিভাবক এবং শিশুদের করোনাভীতি দূর করতে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের দিবা শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আজিজুর রহমান বলেন, সরকারে নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সব ব্যবস্থাই সম্পন্ন করেছি। আমাদেরও মনিটরিং করার জন্য আলাদা কমিটি করা হয়েছে। তারা সবকিছু দেখাশোনা করবেন।

সরকারি কবি নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমেনা বেগম বলেন, দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফেরার জন্য আমরা শিক্ষকরা যেমন উদগ্রীব, তেমনি শিক্ষার্থীরাও ক্লাসে ফিরতে মরিয়া। শিক্ষক-ছাত্রদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যা যা করণীয় সবকিছুই করা হয়েছে। যদি কিছু সমস্যা হয় সেটাও তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করা হবে।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বলেন, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের শতভাগ সুরক্ষা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। কিন্তু দেখা যায়, অভিভাবকরা বাইরে বসে আড্ডা দেন। জটলা পাকিয়ে বসে থাকেন। এতে করে করোনার ঝুঁকি রয়েছে। বাচ্চাকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে গেটের বাইরে ভিড় না করার পরামর্শ দেন তিনি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button