রাজনীতিলিড নিউজ

ইসলাম প্রচারে যেমন ছিলেন বঙ্গবন্ধু

বঙ্গবন্ধু একটি নাম, একটি ইতিহাস। তিনি যেমন ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিক বাঙালি, তেমনি ছিলেন একজন ধর্মপরায়ণ মুসলমান। তিনি যেভাবে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের মহান স্থপতি ছিলেন, তেমনি বাংলাদেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামের প্রচার-প্রসারেরও স্থপতি ছিলেন। এ দুটি অনন্য সাধারণ অনুষঙ্গ বঙ্গবন্ধুর জীবনকে করেছে প্রোজ্জ্বল।

তিনি ইসলামের উদারনৈতিক অসাম্প্রদায়িক সাম্য ও মৈত্রীর চিরন্তন ভিত্তিকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। স্বাধীন এই বাংলাদেশে ইসলামের অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা প্রশংসিত। বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে দীন ইসলামের প্রচার-প্রসারে যে ভূমিকা রেখেছেন, তা সমকালীন ইতিহাসে বিরল।

মুসলমানদের সমাজজীবনে সত্যিকার ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা, দেশের বিভিন্ন এলাকায় মসজিদ ও ইসলামী কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করা এবং ইসলাম সম্পর্কে গবেষণা ও ইসলামের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকালে অধ্যাদেশে বলা হয়েছিল, ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্য হবে সভ্যতা ও
সংস্কৃতিতে ইসলামের অবদান সম্পর্কে গবেষণা এবং বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলামের মূলনীতির প্রসার করা।’ ১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন অ্যাক্ট’ বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত হয়। এ আইনের ভূমিকায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিবৃত হয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন জন্মলগ্ন থেকে তার মহান উদ্দেশ্য সামনে রেখে বাংলাদেশে ইসলামী চেতনা ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রকাশনা, গবেষণা, অনুবাদ, ইসলামী বিশ্বকোষ, সংস্কৃতি ও দাওয়াহ, ইসলামিক মিশনসহ ১৪টি বিভাগে এ প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। বাংলাদেশে ইসলামকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। ইসলামী আকিদাভিত্তিক জীবনযাপন ও ইসলামী শিক্ষা ব্যাপক বিস্তারের জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন করেন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন করার ফলে আজ বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশে মাদ্রাসাগুলো একটি সুসংহত নিয়মনীতির অধীনে তথা বোর্ডের অধীনে হওয়ায় মাদ্রাসাগুলোর ভিত্তিও সুদৃঢ় হয়েছে। ক্রমেই দেশের প্রতিটি জেলা সদরসহ অনেক উপজেলা পর্যায়েও এখন কামিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পবিত্র কোরআনের যেসব আয়াত ও হাদিসে কোরআন তেলাওয়াতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, সেদিকে বিবেচনা করে বঙ্গবন্ধুই সর্বপ্রথম বেতার ও টেলিভিশনে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে পবিত্র কোরআন ও তার তাফসির এবং অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রচারের সুব্যবস্থা করেন। ফলে প্রতিদিনের কর্মসূচি সকালে শুভ সূচনা হয় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে এবং কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমেই দিবসের কর্মসূচি শেষ করা হয়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই এ ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। প্রচার মাধ্যমে সে ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে।

তাবলিগ জামাত বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদ তাবলিগ জামাতের জন্য মারকাজ বা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। তাবলিগের প্রচারমূলক কাজ বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত হওয়ায় প্রতিবছর বিশ্বের অনেক মুসলমান বিশ্ব ইজতেমায় শরিক হন।

ফলে কাকরাইল মসজিদের গুরুত্ব অনেকগুণে বৃদ্ধি পায়। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ হওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক পরিচিতি এবং খ্যাতির দিক দিয়ে কাকরাইল মসজিদের গুরুত্ব বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত মেহমানদের অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় মসজিদ সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ব্যাপারটি পেশ করা হলে তিনি তাবলিগ জামাতের কাজের সুবিধার্থে ইসলামকে ভালোবেসে রমনা পার্কের বেশ কিছু জায়গায় কাকরাইল মসজিদ সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধা করার জন্য বঙ্গবন্ধু স্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবে তুরাগ নদের তীরবর্তী জায়গাটি প্রদান করেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তাবলিগ জামাত ওই স্থানে বিশ্ব ইজতেমা করে আসছে।

হজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। বিশ্ব মানবতাকে ঐক্যের আলোকধারায় নিয়ে আসার অনন্য ব্যবস্থা হলো হজ। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। সে কারণে বঙ্গবন্ধু হজ পালনের জন্য সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং হজ ভ্রমণে কর মওকুফ করে দিয়েছিলেন। ফলে হজ পালনকারীদের আর্থিক সাশ্রয় হয়।

বঙ্গবন্ধু সরকার আইন করে মদ, জুয়া, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘোড়দৌড়ের নামে জুয়া, হাউজি, লটারি এবং গেট-এ-ওয়ার্ড প্রভৃতি ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। এমনকি সরকারি অনুষ্ঠানে বিদেশিদের জন্য মদ পরিবেশনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আগস্টের এই শোকের মাসে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি এবং বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে তাঁর গৃহীত কর্মকাণ্ডের উছিলায় মহান রব যেন তাঁকে আখেরাতের জীবনে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদাদান করেনÑ সে প্রার্থনা করি।

লেখক: খতিব, গনি মিয়া হাট শাহি জামে মসজিদ, চকবাজার, ঢাকা

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button