তালিকাভুক্তি হতে হবে তিন মাসের মধ্যে
পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা বীমা কোম্পানিগুলোকে আগামী তিন মাসের মধ্যে তালিকাভুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। যেসব বীমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে না, তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। গতকাল রবিবার দেশের সব বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী এসব কথা জানিয়েছেন। বীমা খাতের উদ্যোক্তাদের দাবিকে সমর্থন করে দেশের সব ভবন বীমার আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
দেশে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলে মোট ৭৮টি সাধারণ ও জীবন বীমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে ৪৭টি। বাকি ৩১টি পুঁজিবাজারের বাইরে রয়েছে, যাদের মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোরেশন রয়েছে।
যদিও রাষ্ট্রায়ত্ত দুই বীমা কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবে কি না, তা স্পষ্ট করেননি অর্থমন্ত্রী। এছাড়া মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করছে শাখা হিসেবে। এর ফলে ২৮ বীমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে।
গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বীমা উদ্যোক্তা ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে এ বৈঠক হয়। বীমা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী, বাংলাদেশ বীমা অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি শেখ কবির হোসেনসহ বীমা কোম্পানিগুলোর সব এমডি ও চেয়ারম্যান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১ মার্চ প্রতি বছর বীমা দিবস পালন করা হবে বলে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন।
সভা শেষে মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, এক দেশে দুই আইন হতে পারে না। কেউ পুঁজিবাজারে থাকবে, কেউ বাইরে থাকবে এটা হতে পারে না। দেশের যেসব বীমা কোম্পানি এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি সেসব কোম্পানিকে আগামী তিন মাসের মধ্যে তালিকাভুক্ত হতে হবে।
বীমা খাতের উদ্যোক্তারাও এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। তিন মাসের মধ্যে যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারবে না তাদের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হবে। তারপর একাধিক কোম্পানি মিলে একীভূত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। এরপরও যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে পারবে না তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, সরকার একটা উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে লাইসেন্স দিয়ে থাকে। এই উদ্দেশ্য পূরণ না হলে লাইসেন্স বাতিল হবে এটাই স্বাভাবিক। বীমা কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে এলে পুঁজিবাজার আরও শক্তিশালী হবে।
অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বীমা কোম্পানির সংখ্যা অনেক বেশি বলে অভিযোগ রয়েছে। তারপরও চাহিদা খাত সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ উপেক্ষা করে ২০১৩ ও ’১৪ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় আরও ১৬টি বীমা কোম্পানির অনুমোদন দেওয়া হয়। এর ফলে দেশে মোট বীমা কোম্পানির সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৮টিতে। বাংলাদেশের তুলনায় পার্শবর্তী দেশ ভারতের জিডিপির আকার বেশ বড় হলেও সেখানে বীমা কোম্পানির সংখ্যা মাত্র ১৫টি। এ কারণে দেশে চাহিদার তুলনায় বীমা কোম্পানি বেশি হওয়ায় নতুন কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না।
নতুন বীমা কোম্পানিগুলো কাক্সিক্ষত প্রিমিয়াম আয় করতে না পারায় মূলধন ও গ্রাহকের সঞ্চয় ভেঙে চলছে। নতুন বীমা কোম্পানিগুলোর উল্লেখযোগ্য অংশই রয়েছে লোকসানে। বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন বীমা কোম্পানিকে আর্থিকভাবে লাভবান হতে হলে বছরে অন্তত ১০ কোটি টাকার প্রিমিয়াম আয় থাকতে হয়। কিন্তু ২০১৮ সালের তিন প্রান্তিকে অতালিকাভুক্ত ১৩ জীবন বীমা কোম্পানির প্রিমিয়াম আয় ছিল ৩৬ লাখ থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকার মধ্যে। কাক্সিক্ষত প্রিমিয়াম আয় না থাকায় নতুন বীমা কোম্পানিগুলো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না।
তবে নতুন জীবন বীমা কোম্পানির তুলনায় কিছুটা স্বস্তিদায়ক অবস্থানে রয়েছে নতুন সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো। যদিও সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো ব্যবস্থাপনায় অতিরিক্ত ব্যয় করছে, যা নিট মুনাফা কমিয়ে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে এসব বীমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির নির্দেশ দিলেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বীমা খাতের উদ্যোক্তারা দেশের সব ফ্ল্যাট এবং আবাসিক ও অনাবাসিক ভবন বীমার আওতায় আনার যে দাবি জানিয়েছেন, সেটিও ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা হবে। আমাদের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে দেশকে একটি টেকসই অবস্থানে নিতে বীমা খাতকে অবশ্যই আশানুরূপ জায়গায় নিতে হবে।
বীমা খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের দুর্ঘটনা ইন্স্যুরেন্স কাভার করতে হবে। উঁচু-নিচু সব ভবন শতভাগ বীমার আওতায় আসতে হবে। যার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিও একটি টেকসই অবস্থানে পৌঁছে যেতে পারবে। এখন আমরা ইন্স্যুরেন্স খাত থেকে সুবিধা নিতে চাই। সবাই যেন লাভবান হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
এদিকে বীমা কোম্পানির ব্যবসা বাড়ানোতে অর্থমন্ত্রীর পুঁজিবাজারে এ খাতের শেয়ারে বড় প্রভাব পড়েছে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ৪৭ বীমা কোম্পানির মধ্যে ৪৫টির দরই বেড়েছে। এর মধ্যে সাধারণ বীমা কোম্পানির শেয়ার দর গড়ে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ ও জীবন বীমা কোম্পানির শেয়ার দর গড়ে আড়াই শতাংশ বেড়েছে।