অর্থনীতি

টিকে থাকার জন্য ৬২৮ কোটি টাকা আবদার করেছে বিমান

একের পর এক ফ্লাইট বাতিল, স্থগিত আর বাতিল হওয়া ফ্লাইটের টাকা যাত্রীদের ফেরত দিতে দিতে নগদ টাকা শেষ হয়ে গেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। সরকারের কাছে তাৎক্ষণিক টাকা না পেলে আপাতত ফ্লাইট অপারেশনে যেতে পারবে না তারা। এককথায় পথে বসতে চলেছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। সেজন্য তাদের টেনে তোলার আহ্বান জানিয়ে সরকারের কাছে ৬২৮ কোটি টাকা আবদার করেছে বিমান। সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে নিজেদের ‘দৈন্যদশা’ ও ‘হাল-হকিকত’ তুলে ধরে একটি চিঠি দেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এতে বিমানের বর্তমান আর্থিক ক্ষতি ও তারল্য সংকট তুলে ধরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওই ৬২৮ কোটি টাকা চাওয়া হয়। চিঠিতে গত দুই মাসে বিমানের ক্ষতির কারণগুলো তুলে ধরে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই মাসে অসংখ্য ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে, যাত্রী সংকটের কারণে ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া ফ্লাইট স্থগিত করা রুটে কোনো ধরনের চার্জ না কেটেই টিকিটের টাকা যাত্রীদের ফেরত (রিফান্ড) দেয়া হয়েছে। এ কারণে বিমানের কাছে কোনো নগদ টাকা নেই। তাই এপ্রিল মাসে কর্মীদের বেতনসহ নানা স্থায়ী খরচ (ফিক্সড কস্ট) চালাতে সরকারের কাছে ৬২৮ কোটি টাকা চাওয়া হচ্ছে।

মন্ত্রণালয়কে দেয়া চিঠিতে বিমান উল্লেখ করেছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বিমান এশিয়ার রুটগুলোতে যে পরিমাণ যাত্রী বহন করেছিল, এ বছরের (২০২০) একই সময়ে যাত্রীসংখ্যা কমেছে ১৫ শতাংশ। ফেব্রুয়ারির পরিসংখ্যান আরও ভয়াবহ। এই মাসে আগের (ফেব্রুয়ারি, ২০১৯) তুলনায় যাত্রী কমেছে ৫৮ শতাংশ। এ কারণে মার্চে ১১৪টি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে বিমানকে। আর করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির কারণে মার্চে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে বিমানের মোট ৬৯৮টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এছাড়া ফ্লাইট বাতিলের কারণে কোনো ধরনের চার্জ না কেটেই যাত্রীকে সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দিতে হয়েছে।

বিমান সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে কার্গো পণ্য ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করে ৯০০ কোটি টাকা আয় করেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। গড়ে প্রতি মাসে ৭৫ কোটি টাকা আয় করতো বিমান। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে আমদানি-রফতানি কমে যাওয়ায় এবং ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ৯০ কোটি টাকা আয় করেছে তারা। গড়ে আয় হয়েছে মাসে ৩০ কোটি টাকা।

এসব কারণে মার্চে বিমানের রাজস্ব আয় কমেছে ৪০০ কোটি টাকা। চিঠিতে বিমান উল্লেখ করেছে, প্রতিষ্ঠার পর এ ধরনের আর্থিক সংকটে কখনো পড়েনি বিমান। তাই বর্তমানে পরিচালন ব্যয় বহন কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের।

চিঠিতে বলা হয়েছে, আয় না থাকলেও বিমানের প্রতিমাসে ৬২৮ কোটি টাকা ফিক্সড কস্ট আছে। সেগুলো হচ্ছে- বিমানের মাসিক ফিক্সড খরচ (স্থায়ী পরিচালন ব্যয়) ২০৩ কোটি টাকা, উড়োজাহাজের ঋণের কিস্তি ৬১ কোটি, প্লেনের লিজ ভাড়া ৯৮ কোটি টাকা এবং বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ২৬৬ কোটি টাকা।

জাতীয় সংসদে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর দেয়া তথ্য মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই- ডিসেম্বর) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর পূর্ব নিট লাভ করেছে ৪২৩ কোটি টাকা।

বিমানের এই লাভের সিংহভাগ এসেছে হজফ্লাইট থেকে। কারণ বাংলাদেশে একমাত্র বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্স একচেটিয়াভাবে সব হজযাত্রী বহন করে। ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯১ জনের হজে যাওয়ার কথা ছিল। যার ৫০ শতাংশ ৬৮ হাজার ৫৯৫ জনকে বহন করতো বিমান। প্রতি টিকিট এক লাখ ৩৮ হাজার টাকা হলে শুধু হজযাত্রী বহন করেই ৯৪৬ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার টাকা আয় করতো প্রতিষ্ঠানটি। তবে যদি হজ বাতিল হয় তাহলে এই আয়ও হবে না বিমানের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারাবছর জোড়াতালি দিয়ে চললেও বিমানের একমাত্র লাভের উৎস হজফ্লাইট। যদি এ বছর হজফ্লাইট বাতিল হয় তাহলে বিমানকে টেনে তোলা কষ্টকর হয়ে যাবে।

আগামী জুলাইয়ের শেষের দিকে অনুষ্ঠেয় হজ বাতিলের বিষয়ে সৌদি আরব এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না দিলেও দেশটিতে প্রতিদিনই ২৪ ঘণ্টা করে কারফিউ দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে সৌদি কর্মকর্তাদের বরাতে ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর হজ বাতিল হতে পারে। ইসলামের ইতিহাসে অবশ্য হজ বাতিলের ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে আধুনিক ইতিহাসে এটা বিরল ঘটনা। সর্বশেষ ২২২ বছর আগে ১৭৯৮ সালে হজ বাতিল করা হয়েছিল।’

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button