লাইফ-স্টাইল

কিডনি ভালো রাখতে আকুপ্রেশার

আধুনিক সভ্যতার কথা বলে আমরা আমাদের খাদ্যব্যবস্থার নানা ক্ষতি করেছি। এর মধ্যে নানা রাসায়নিকের প্রভাবে আমাদের সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটা হয়, তা হলো কিডনিজনিত। ফলে কিডনির সমস্যা ধরা পড়লে শঙ্কিত হওয়ারই কথা। কিডনি মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনির রোগ মানেই অনিশ্চিত চিকিৎসা, এই সমস্যা হলেই ডায়ালাইসিস দরকার হতে পারে। আবার কিডনি ট্রান্সপ্লান্টও করতে হতে পারে। এ পর্যন্ত যাতে যেতে না হয়, তার জন্য কিডনি ঠিকঠাক রাখতে নিয়মিত আকুপ্রেশার অনেক কাজে দেয়। যাদের প্রাথমিক লক্ষণ আছে, তারাও নিয়মিত আকুপ্রেশার করলে সেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

কিডনি সমস্যার লক্ষণ

মানুষের শরীরে ৭০ শতাংশই পানি। ফলে কিডনি সমস্যা বোঝা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, এই সমস্যার প্রাথমিক উপসর্গগুলো আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। তাই যখন আমরা টের পাই তখন অনেকের কিছুই করার থাকে না ডায়ালাইসিস ছাড়া। আর ডায়ালাইসিস কোনো চিকিৎসা নয়। প্রাথমিকভাবে ক্ষুধামান্দ্য, বমিভাব, বমি, পায়ে পানি আসা, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া কিংবা অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপের মতো কোনো একটি সমস্যা দিয়ে কিডনি সমস্যার শুরুটা অনুমান করা হয়। অনেকেরই কোনো ধরনের উপসর্গ থাকে না, হঠাৎ প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়, পা ফুলে যায়, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের ক্ষেত্রে এটা বেশি দেখা যায়। মনে রাখতে হবে, দেহের দুই কিডনিতে আছে ২০ লাখ ছাঁকনি যন্ত্র। ২৪ ঘণ্টায় ১৮০ লিটার রক্ত ছেঁকে বের করে দেড় লিটার বর্জ্য। সেটাই আসলে মূত্র। আর এই ছাঁকনিতে সমস্যা হলেই রক্তে বর্জ্যের পরিমাণ বেড়ে যায়। সেটাই অসুস্থতা।

কিডনি সমস্যা যাঁদের বেশি হতে পারে

কিডনির একটি প্রধান কাজ দেহের পানি ও খনিজের ভারসাম্য ঠিক রাখা, দুর্বল কিডনি তা করতে পারে না। তাই দেহে দেখা দেয় পানি ও খনিজের ভারসাম্যহীনতা। পানির তারতম্য হলে শরীর অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে সঠিক উপায়ে পানি পান না করা, অতিরিক্ত পানি পান করা, লবণ বেশি খাওয়া, অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড, কোল্ডড্রিংকস খাওয়া, বিশেষ করে বোতলজাত নানান এনার্জি ড্রিংকসে আসক্তি ইত্যাদি।

তা ছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ও দীর্ঘ দিনের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির প্রদাহ কিংবা মূত্রপ্রবাহে বাধা সৃষ্টিকারী কোনো সমস্যা থাকলে কিডনির রোগ হতে পারে। অনেকের জন্মগত কিছু সমস্যার কারণেও এ রোগ দেখা দেয়। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় কিডনির সমস্যা হতে পারে, দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ, নানা ধরনের শক্তিবর্ধক ওষুধেও কিডনির সমস্যা হতে পারে। হঠাৎ তীব্র বমি বা পাতলা পায়খানা হলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যদি বমি বা পায়খানার সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়া পানি ও লবণের ঘাটতি দ্রুত পূরণ না করেন। অতিরিক্ত আমিষজাতীয় খাবার গ্রহণের কারণেও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

আকুপ্রেশার

কিডনি সমস্যা থাকুক বা না থাকুক, নিয়মিত আকুপ্রেশার করা যাবে। বিশেষ করে যাঁরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, আবার অনেকের প্রস্রাব ঘন রঙের হয়ে থাকে, তাঁরা নিয়মিত আকুপ্রেশার করলে এমন উপসর্গ থাকলেও তা দূর হবে। আর যাঁদের উপসর্গ নেই, তাঁদের কিডনি ভালো থাকবে।

কিডনির আকুপ্রেশার করার আগে দুই হাতের তালু ভালো করে ঘষে নিন, দুই হাত এমনভাবে ঘষবেন, যেন দুই হাত গরম হয়ে ওঠে। তারপর ছবিতে দেখানো পয়েন্টে আকুপ্রেশার করুন। ছবিতে দেখানো পয়েন্টে একশবার চাপ দিন, চাপ এমন হবে যে আপনি যেন তালুতে একটু ব্যথা অনুভব করেন।

প্রথম পয়েন্টের ঠিক এক ইঞ্চি নিচের দিকে কিডনির পয়েন্ট, এই পয়েন্ট ঠিক বুড়ো আঙুলের শেষ ও মধ্যমা আঙুলের শেষে যেখানে মিশেছে। এখানেও একশবার করে চাপ দিন, এখানে চাপ দিলে অনেকেই ব্যথা অনুভব করতে পারেন, যাঁরা ব্যথা অনুভব করবেন, তাঁরা এক সপ্তাহ আকুপ্রেশার করলে হাতের ব্যথা কমে যাবে।

কিডনির সহযোগী পয়েন্ট হিসেবে লিম্ফ পয়েন্ট আকুপ্রেশার করা উত্তম, আমাদের শরীরে লিম্ফ সক্রিয় থাকলে কোষের বর্জ্য বের করতে সাহায্য করে, তাই ছবিতে দেওয়া পয়েন্টে একশবার আকুপ্রেশার করুন, লক্ষ করুন প্রথমে যে পয়েন্টে আকুপ্রেশার করেছেন, তা মধ্যমা আঙুলের নিচে দ্বিতীয়টিও মধ্যমা আঙুল বরাবর এবং এই তৃতীয় পয়েন্টটা একই লাইনে নিচের দিকে নেমে আসবে।

আকুপ্রেশার প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে শোয়ার আগে করবেন। দুই হাতে তিনটি পয়েন্টে একশবার করে সপ্তাহে ছয় দিন করবেন। এক দিন বিরতি দিয়ে আবার শুরু করবেন। এতে ফল পাবেন।

আমাদের বর্তমান জীবনযাপনে কিডনিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে ভেজাল খাদ্য, প্যাকেটজাত লবণাক্ত খাবার আমাদের চারপাশে কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়াচ্ছে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপজনিত কিডনি সমস্যায় অনেকেই ভুগছেন। শুরু থেকে সচেতনভাবে জীবনযাপন করলে এই কিডনি সমস্যা জটিলতর পর্যায়ে যাওয়া থেকে প্রতিরোধ করা যায়। আজীবন সুস্থ থাকা যায় কিডনির রোগ নিয়েই। খাবারের বেলায় কিডনি রোগীকে সতর্ক থাকতে হয়।

দীর্ঘমেয়াদি কিডনির সমস্যায় পানি, লবণ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমিষজাতীয় খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে, নির্ধারিত পরিমাণ মাছ, মাংস ও ডাল খেতে হয়, ক্ষেত্রবিশেষে উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত কিছু ফল কম পরিমাণে খেতে বলা হয় এবং কারও ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকলে লাল মাংস, কলিজা, মগজ, সামুদ্রিক মাছ প্রভৃতি খাবার খেতে নিষেধ করা হয়। নিয়মিত শরীরচর্চার কোনো বিকল্প নেই। অন্য ব্যায়াম করতে না পারলেও অবশ্যই হাঁটুন রোজ।

কিডনি রোগ প্রতিরোধে দরকার সুস্থ জীবনধারা ও সুষম খাদ্যাভ্যাস। কোনো পুষ্টি উপাদান বেশি গ্রহণ করা এবং পরিহার করার বিষয়ে নজর দিতে হয়। ৪০ বছর বয়সের পর কিডনির কর্মক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই একটু একটু করে কমতে থাকে। ব্যথার ওষুধ যতটা সম্ভব কম সেবন করা যায়, ততই কিডনির জন্য ভালো।

লেখক: খাদ্য, পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button