রাজশাহী বিভাগসারাদেশ
আম চাষে একজন সফল উদ্যোক্তার গল্প
চাপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছেলে গোলাম রসুল। ছোটবেলা থেকেই আমের সাথেই বেড়ে উঠা। আম এবং আমের বাগানের ভিতর পিচঢালা রাস্তার মধ্যে দিয়েই পথ চলা শুরু। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজারামপুর হামিদুল্লাহ হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে এখন পড়ছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(নোবিপ্রবি) ফলিত গণিত বিভাগে। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি এখন সফল একজন উদ্যোক্তা। কাজ করছেন ফলের রাজা আম নিয়ে। ‘চাঁপাই-রাজশাহীর আম অফিসিয়াল গ্রুপ’ এর কর্ণধারও তিনি।
শুরুটা যেভাবেঃ
গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু-বান্ধবদের কাছে সবসময় আলাদা একটা চাহিদা ছিল গোলাম রসুলের। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে থাকাকালীন সময়ে ছুটিতে বাড়িতে এসে আবার ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার সময় বন্ধুদের জন্য আম নিয়ে যেতেন তিনি। ধীরে ধীরে এই আম নিয়ে কিছু একটা করার চিন্তা তার মাথায় আসে। তিনি জানতেন এটি দেশের সম্ভাবনাময় সেক্টরগুলোর একটি। এলাকায় অনেকের সাথে আম নিয়ে কথা বলার পর হাতেগোনা ২-১ জন ছাড়া অনেকেই বিষয়টি গুরুত্ব দেয় নি। কিন্তু তিনি থেমে যাননি। সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছা আর মনোবল নিয়ে তিনি এই সেক্টরে প্রবেশ করেন। শুরুতে আমের মৌসুম আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু, সিনিয়র-জুনিয়র,টিচার ও কর্মচারিদের প্রায় সবার আমের চাহিদা মেটাতে থাকেন তিনি। বিশ্বস্ত হয়ে ওঠায় ধীরে ধীরে ক্যাম্পাসে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। সেখান থেকেই যাত্রা শুরু তার। ২০১৬ সালে এসে তিনি ই-কমার্সকে বেছে নেন ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য। তিনি ফেসবুকে প্রতিষ্ঠা করেন “চাঁপাই-রাজশাহীর আম” নামের পেজ ও “চাঁপাই- রাজশাহীর আম অফিসিয়াল গ্রুপ” নামের একটি গ্রুপ। এ ছাড়াও বর্তমানের জনপ্রিয় ই কমার্স গ্রুপ উই থেকেও অনেক ক্রেতা পাচ্ছেন তিনি।
লাভ- ক্ষতিঃ
গোলাম রসুল জানান, শুরুর দিকে খুব একটা লাভ না হলেও ধীরে ধীরে পরিচিতি বাড়ার সাথে সাথে লাভের গ্রাফও ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। গত বছর আমের মৌসুমে ১০ টন আম তিনি সারা বাংলাদেশে সরবরাহ করেন এবং তার বর্তমান মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রা পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে ১০০ টন আম সরবরাহ করা। এছাড়াও তার এই সেক্টরে কাজ করছেন অনেক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বেকার যুবক যারা সারাবছরই আমের বাগান দেখাশুনা ও পরিচর্যা করেন। তিনি জানান, জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও তার এই কাজের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। এই সেক্টরে কাজ শুরু করার সময় তেমন কারো অনুপ্রেরণা তিনি পাননি। তিনি জানান, যখন আম নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন তখন এই উদ্যোগ দিয়ে কিছু একটা যে হবে এগুলো মানুষ চিন্তাও করতে পারতো না। তিনি আরোও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে যেহেতু আমি একটি অপরচুনিটি পেয়েছিলাম তাই এটিকে আমি সর্বোচ্চ ভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি’।
গোলাম রসুলের স্বপ্ন:
তিনি বলেন, “আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমাদের বাগানগুলোতে সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে আম উৎপাদন ও সরাসরি বাগান থেকে মধুমাসের পুরোটা সময় জুড়ে দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে যেকোন ধরনের মেডিসিন মুক্ত নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত আম স্বাস্থ্যসচেতনদের নিকট পৌঁছে দিতে চাই।”
নতুনদের জন্য রসুলের কিছু কথা:
গোলাম রসুল বলেন, ‘এই সেক্টরটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ। কাঁচামাল হওয়ায় সর্বদায় সচেতন থাকতে হয়। আম সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান ছাড়া এই সেক্টরে আসা অনুচিত। কারন সবসময় ক্রেতার স্যাটিসফেকশনের চিন্তা মাথায় রাখতে হয়। পর্যাপ্ত জ্ঞান ছাড়া এই সম্ভাবনাময় সেক্টরে আসলে হোঁচট খাওয়ার শঙ্কাই বেশি বলে মনে করেন তিনি।’