সৈয়দপুরে নিষিদ্ধ পলিথিনের ছড়াছড়ি
নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি: নীলফামারীর সৈয়দপুরে বেড়েই চলছে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার। অল্প পুঁজিতে পলিথিনের কারখানা করে অনেক লাভবান হওয়া যায় বলে অনেকেই ওই অবৈধ ব্যবসায় ঝুঁকছে। এছাড়া অধিকাংশ পলিথিন কারখানাতেই রয়েছে ৪৪০ ভোল্ট বিদ্যুতের চোরাই লাইন । অগ্নিনির্বাপনসহ কারখানাগুলোতে নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এমন তথ্য স্থানীয় একটি সূত্রের।
তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের রংপুর অফিসের উপ-সহকারি পরিদর্শক (নীলফামারী জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত) মনোয়ার হোসেন বলেন, খুব শিগগিরি সৈয়দপুরে অবৈধ পলিথিন কারখানায় অভিযান পরিচালনা করা হবে। তবে শুধু পরিবেশ অধিদফতর একা পলিথিন বন্ধ করতে পারবে না। তার সাথে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,পরিবেশ অধিদপ্তর ২০০২ সালে এক প্রজ্ঞাপনে পলিথিনের সব ধরনের শপিং ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাত, বিক্রি, প্রদর্শন, মজুদ ও বিতরণ নিষিদ্ধ করে। কিন্তু সেই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে এ উপজেলায় অবাধে চলছে পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন প্রক্রিয়া। পলিথিন উৎপাদনের মেশিন এখানেই পাওয়া যায়। ফুলসেট মেশিনের দাম সর্বোচ্চ ১৪ লাখ। সব মিলিয়ে ১৫ লাখ টাকায় একটি পলিথিন উৎপাদনের কারখানা করে মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করা যায়। তাই এখন অনেকেই ঝুকছেন এ ব্যবসায়। উপজেলায় গড়ে উঠেছে শতাধিক পলিথিনের কারখানা। প্যাকেজিংয়ের ব্যবসার আড়ালে এসব কারখানায় নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরি হচ্ছে। কারখানাগুলোতে দিনে নামমাত্র প্যাকেজিংয়ের কাজ হলেও মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলে নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন। পরে ‘জরুরি রফতানি কাজে নিয়োজিত’ স্টিকারযুক্ত কাভার্ডভ্যানে করে তা আশে-পাশের জেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়। নিষিদ্ধ পলিথিনের কারখানা স্থাপনসহ এর উৎপাদন ও বিপণনকে ঘিরে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সক্রিয়। মূলত ম্যানেজ করেই কারখানাগুলো পলিথিন উৎপাদন করছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি কারখানাকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। এতে মাসে প্রায় কোটি টাকার চাঁদা সিন্ডিকেটের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। চাঁদা না দিলে ওই কারখানায় অভিযান চলে।
জনা যায়, সৈয়দপুরের বেশিরভাগ পলিথিন কারখানা শহরেই গড়ে ওঠেছে। কয়ানিজপাড়া, চাঁদনগর, সাহেবপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, বাবুপাড়া, শহীদ জহুরুল হক (কাড়িহাটি) সড়ক, টার্মিনাল, গোলাহাট, বিসিক শিল্পনগরী
এলাকাসহ বিভিন্ন আবাসিক ভবনেও গড়ে উঠেছে নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে,পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন স্থান করে নিয়েছে হাটে-মাঠে-ঘাটে, এমনকি সবার রান্না ঘরেও। দৈনন্দিন জীবনের সব কাজে পলিথিনের ব্যবহার চলছে। নিত্যদিনের বাজার সদাই থেকে শুরু করে এক টাকা দামের চকলেট হোক বা লাখ টাকার সোফা সব কিছুর সঙ্গে দেয়া হচ্ছে পলিথিন। আর ওসব পলিথিন ব্যবহারের পর যত্রতত্র ফেলে দেয়া হচ্ছে। ফলে অপচনশীল পলিথিনে ভরাট হচ্ছে পয়োনিষ্কাশনের নালা-নর্দমা। আর তাতে পৌরএলাকায় তৈরি হচ্ছে পানিবদ্ধতা। ধূষিত হচ্ছে পরিবেশ। তাছাড়া পলিথিন চাপা পড়ছে ফসলী জমিতে। পলিথিন বা প্লাস্টিক বর্জ্যে স্থানীয় নদীর পানি পর্যন্ত দূষিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে সৈয়দপুরের পরিবেশবাদী সংগঠন সেতুবন্ধনের সম্পাদক আহসান হাবিব জনি জানান, পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধে আইন থাকলেও তার কার্যকারিতা একেবারেই নেই। প্রথমদিকে ওই আইনের সফল প্রয়োগের ফলে পলিথিন বাজার থেকে প্রায় উঠেই গিয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে আইন প্রয়োগে শিথিলতার কারণে গত কয়েক বছর ধরে পলিথিনের ব্যাগে বাজার ভরে গেছে। তিনি আরও বলেন, পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেয়া হয়। রাস্তা এবং গলি থেকে পলিথিন বাতাসে উড়ে এক পর্যায়ে ড্রেনে-নর্দমায় জমা হয়। রাস্তার মধ্যে থাকা ড্রেনের মুখে পলিথিনের স্তূপ সব সময়ই চোখে পড়ে। তিনি বলেন, পলিথিন ৪০০ বছরেও পঁচে না। অর্থাৎ আজ কাজ শেষে যে পলিথিন গলিতে বা রাস্তায় ফেলা হচ্ছে তা পরিবেশ ধ্বংস করার হাতিয়ার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পলিথিন একদিকে জলাবদ্ধতা বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে মাটির উর্বরতা কমাচ্ছে। আবার তলদেশে জমা হয়ে নদী ভরাট হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে।
এ এছাড়া পরিবেশ নিয়ে কাজ করছেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সৈয়দপুর উপজেলা কমিটির সম্পাদক রুহুল আলম মাস্টার। তিনি বলেন, সরকার এ ব্যাপারে আন্তরিক নয় বলেই নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না।
এদিকে কারখানাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় যে কোনো সময় বগুড়ার শান্তাহারের মতো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর বগুড়ার শান্তাহার পৌর এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা পলিথিন কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৫ জনের মৃত্যু হয়।