জাতীয়

রাশিয়ার হামলা

ক্ষেপণাস্ত্র-বোমায় কাঁপছে ইউক্রেন

ইউক্রেনের প্রধান শহরগুলোতে হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে রাশিয়া। কথিত বিশেষ অভিযানের সপ্তম দিনে গতকাল বুধবার উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমের সীমান্ত শহরগুলোতে ধ্বংসাত্মক হামলা চলে। একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা আর গোলার আঘাতে কেঁপে উঠছে রাজধানী কিয়েভের আশপাশ, দ্বিতীয় বড় শহর খারকিভ আর বন্দরনগরী খারসান। হামলা চলছে আরো বিভিন্ন অঞ্চলে।

মস্কো খারসানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি করলেও ইউক্রেন তা নাকচ করে দিয়েছে।

অন্যদিকে কিয়েভ অভিমুখে রাশিয়ার ৪০ মাইল দীর্ঘ সামরিক বহর গতকাল বিকেলে শহরটির ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসে। তাই সেখানে দ্বিতীয় দফার বড় ধরনের হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকালে তারা আলোচনাস্থলে পৌঁছবে বলে জানানো হয়েছে। রুশ সেনার একটি দল তাদের নিরাপদ করিডর দিচ্ছে বলে রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ জানায়।

হামলার নিন্দা করে জাতিসংঘে প্রস্তাব

গতকাল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার নিন্দা করে এবং সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মাত্র পাঁচটি এর বিপক্ষে ভোট দেয়। দেশ পাঁচটি হচ্ছে রাশিয়া নিজে, মিত্র বেলারুশ, ইরিত্রিয়া, সিরিয়া ও উত্তর কোরিয়া। চীন গত সপ্তাহের নিরাপত্তা পরিষদের ভোটের মতোই ভোটদানে বিরত থাকে। ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ১৪১টি এতে সমর্থন দেয়। বাকিরা ভোটদানে বিরত থাকে।

মারিওপোলে ব্যাপক প্রাণহানি

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিওপোলে গতকাল বড় ধরনের অভিযান চালানো হয়েছে। এতে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। বিবিসির খবরে বলা হয়, মারিওপোলে শত শত মানুষ নিহত হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আলজাজিরা স্থানীয় মেয়রের বরাত দিয়ে জানায়, রুশ বাহিনী শহরটির বেসামরিক লোকজনকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ অবরোধ করে রেখেছে।

খারকিভে নেমেছে রুশ সেনা

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খারকিভ শহরে রাশিয়ার ছত্রীসেনা অবতরণ করেছে। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এই শহরের মেয়র মঙ্গলবার জানান, শহরটিতে রাশিয়ার বিমান হামলায় কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়। খারকিভে পুলিশ সদর দপ্তর ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভবন রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শহরকেন্দ্রের কাছের বাসিন্দা গ্লিব মাজেপাস বলেন, তাঁর বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে ‘ব্যাপক বোমা হামলার’ আগে তিনবার বিমান চক্কর দেয়। মঙ্গলবার খারকিভের ফ্রিডম স্কয়ারে হামলার সময়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যেন কোনো হুইসেলের শব্দ মাথার ওপর দিয়ে চলে গেল…এরপর আঘাত করল। মনে হচ্ছিল, ডানে-বাঁয়ে জিনিসপত্র যতটা কাঁপছিল, আমার বাড়িও ততটা কাঁপছিল না। এটা এক ভয়ংকর অনুভূতি ছিল। ’

খারকিভের স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, গতকাল সকালেও রুশ বাহিনী শহরটির কেন্দ্রস্থলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র, গোলা ও বোমা বর্ষণ করে। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে শহরের প্রশাসনিক ভবনে আগুন ধরে যায়। কিছু অংশ ধসে পড়ে। এ ঘটনায় চারজন নিহত ও ৯ জন আহত হয়। ধসে পড়া অংশ থেকে ১০ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। রুশ বাহিনীর এই হামলা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে তারা।

খারসানের নিয়ন্ত্রণ

কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী বন্দরনগরী খারসান গতকাল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করেছে রুশ বাহিনী। তবে এই দাবি নাকচ করে দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ওলেকসি আরেসতোভিস। তিনি বলেন, গতকাল খারসানে ইউক্রেনের বাহিনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। পথে পথে লড়াই চলছে। এই শহর রুশ বাহিনী দখলে নিতে পারেনি।

খারসানের স্থানীয় গভর্নরের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, রুশ বাহিনী সারা রাত খারসান ঘিরে রাখে। সেনারা দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থানে লুটতরাজও চালিয়েছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে রুশ সেনাদের খারসান শহরের রাস্তায় দেখা গেছে। রাশিয়ার ট্যাংক ও সাঁজোয়াযানও দেখা গেছে। বিবিসি বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।

কিয়েভের আশপাশে ব্যাপক লড়াই

রাজধানীর আশপাশের এলাকায় ব্যাপক লড়াই চলছে। রুশ বাহিনীর হামলায় এসব এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটেছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে কিয়েভ একেবারেই শান্ত ছিল। বিবিসি জানায়, গতকাল সকালে শহরের কেন্দ্রে এতটাই নিস্তব্ধতা ছিল যে দুটি ভবনের মধ্যে বাতাস বয়ে যাওয়ার শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

কিয়েভসংলগ্ন পশ্চিম দিকের শহর ইরপিনে রুশ হামলায় অনেক আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল ভোরের দিকে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে এ চিত্র দেখা যায়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, আবাসিক ভবনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, সেখানে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।

ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রকাশ করা এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ইউক্রেনের সেনারা ইরপিনের পথে হাঁটাহাঁটি করছে, আশপাশে রাশিয়ার সেনা সদস্যদের মতো লাশ পড়ে আছে। আরেক ভিডিওতে যুদ্ধে ব্যবহৃত ধ্বংস হওয়া একটি সাঁজোয়াযান জ্বলতে দেখা যায়।

এদিকে কিয়েভে খাবার ও পানির সংকট দেখা দিয়েছে। মানুষজন নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। রাশিয়ার ৪০ মাইল দীর্ঘ সামরিক বহর কিয়েভের ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে গেছে। কিয়েভের উত্তর দিক থেকে শহরের দিকে এগিয়ে আসছে এই বহর। রুশ বাহিনীর সঙ্গে এই বহর যুক্ত হলে কিয়েভে ব্যাপক অভিযান চালাবে রাশিয়া।

প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছে মানুষ

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছাড়ছে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত আট লাখ ৩৬ হাজার মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। বেশির ভাগই পোল্যান্ড সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে। ইউক্রেন জানিয়েছে, রুশ হামলায় এ পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button