জাতীয়রাজনীতিলিড নিউজ

সম্রাট গ্রেফতার হওয়ায় ক্ষুব্ধ যুবলীগের একাংশ

ক্যাসিনো বাণিজ্যে বিতর্কিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট গ্রেফতার হওয়ার পর যুবলীগের একাংশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তাদের ভাষ্য, সম্রাট দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। দলের দুঃসময়ে, আন্দোলন-সংগ্রামে বুক চিতিয়ে রাজপথে থাকেন এই নেতা।

সম্রাটের অনুসারী ও কয়েকজন ঘনিষ্ঠ নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একসময় যারা সম্রাটের কাছ থেকে সুবিধা নিতেন আজ তাদের অনেককেই দেখা যাচ্ছে না। গা ঢাকা দিয়েছেন কেউ কেউ, আবার অনেক সুযোগ সন্ধানীরা নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে যুবলীগের কয়েকজন নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজ দল ক্ষমতায় আছে বলে রাজপথের লড়াকু নেতা সম্রাটকে দল থেকে ছুড়ে ফেলা হল। অথচ দলের দুঃসময়ে রাজপথে সম্রাটই নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখন তার আর প্রয়োজন নেই।

কারণ যদি রাজপথে বিরোধীরা কোনো সহিংসতায় নামে, তাহলে প্রশাসন দিয়ে মোকাবেলা করা যাবে। কিন্তু ক্ষমতা যদি একবার ফসকে যায়, তখন সম্রাটের মতো লড়াকুদের প্রয়োজন কতটুকু বোঝা যাবে। ‘সুশীলদের’ সমালোচনা করে ওই নেতারা বলেন, রাজপথের রাজনীতি সুশীল দিয়ে হয় না। যেসব সুশীলরা সম্রাটের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তারা দলের দুঃসময়ে কোনো কাজে আসেন না।

রাজপথের রাজনীতিতে সম্রাটের মতো লড়াকু নেতা প্রয়োজন। আজ আমাদের খারাপ লাগছে এই জন্য যে লোকটা দলের জন্য এতকিছু করল, অথচ আজ দল তাকেই ছুড়ে ফেলে দিল।

সম্রাটের উদ্দেশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান পলাশ তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আজ অনেকেই ভদ্রতার মুখোশ পড়েছে, যারা আপনার অফিসে হাজিরা দিত, তারাই আজ বড় বড় কথা বলে, জাতীয় নির্বাচনের সময় আপনার কী কদর সবাই নমিনেশন পেয়ে আপনার অফিসে হাজির, কত নেতা দেখেছি ওয়েটিং রুমে বসে থাকতে, কেউ কেউ তো আবার কবিতাও লিখতো আপনাকে নিয়ে, যাই হোক রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র থাকবেই…তাই বলে এত নোংরামি!

আপনার মতো লোক দলে খুবই প্রয়োজন, ইনশাআল্লাহ আইনি সব লড়াই লড়ে ষড়যন্ত্রের সব জাল ছিন্ন করে ঢাকার রাজপথে আবার ফিরবেন…অনেক কথা বলার ছিল আজ আর বললাম না, ষড়যন্ত্রকারীদের বিজয় সাময়িক স্থায়ী নয়। সম্রাটের উদ্দেশে তিনি আরও লিখেন, ‘আপনার মতো কেউ বলে না খেয়েছো, যাও খেয়ে নাও। আপনি ছিলেন কর্মীবান্ধব নেতা…ভাই আপনার মূল্যায়নটা করতে পারল না কেউ…আপনাকে এভাবে দেখব কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি। আল্লাহ আপনার হেফাজত করবে ইনশাআল্লাহ।’

এদিকে সম্রাটকে নিয়ে তার কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান শেষ করে সন্ধ্যায় বের হলে তাকে ঘিরে মিছিল করে অনুসারীরা। পরে র‌্যাব পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় সম্রাট সমর্থক যুবলীগের শতাধিক নেতাকর্মী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে র‌্যাব তাকে নিয়ে কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে চলে যায়।

প্রসঙ্গত, রোববার ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রাম থেকে সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার সহযোগী আরমানকেও গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে তাদেরকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

আলোচিত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ঢাকার জুয়াড়িদের কাছে ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত। জুয়া খেলাই তার পেশা ও নেশা। প্রতি মাসে ঢাকার বাইরেও যেতেন জুয়া খেলতে। সম্প্রতি রাজধানীতে ক্লাব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েন সম্রাটের ডান হাত হিসেবে পরিচিত যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া।

এর পর ধরা পড়েন রাজধানীর টেন্ডার কিং আরেক যুবলীগ নেতা জিকে শামীম। এ দুজনই অবৈধ আয়ের ভাগ দিতেন সম্রাটকে। তারা গ্রেফতার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাটের অবৈধ ক্যাসিনো সাম্রাজ্য নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। প্রকাশ্যে চলে আসে সুন্দর অবয়বের আড়ালে সম্রাটের কুৎসিত জগৎ। এতে করে বেকায়দায় পড়েন সম্রাট।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button