ফুটবলে নতুন যুগের সূচনা
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশের গতিময় ফুটবলের সামনে অসহায় দেখিয়েছে ভারতকে। মঙ্গলবার কলকাতার মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে হারতে হারতে ১-১ ড্র করেছে স্বাগতিকরা। ভারতের কোটি কোটি দর্শক দেখেছে ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে’র অধীনে বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে। জামাল ভূঁইয়া, সাদ উদ্দিনদের অসাধারণ পারফরম্যান্স মুগ্ধ করেছে বাংলাদেশের সাবেক কোচ ও খেলোয়াড়দের।
হাসানুজ্জামান খান বাবলু (জাতীয় দলের সাবেক কোচ): আমি বাংলাদেশের সাবেক ফুটবলার ও কোচ হিসেবে জাতীয় দলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। কারণ ভারতের মতো দলের সঙ্গে দুর্দান্ত খেলে এক পয়েন্ট পেয়েছে জামাল ভূঁইয়ারা। ম্যাচে বল পজশেনে এগিয়ে ছিল ভারত। রক্ষণাত্মক খেলে কাউন্টার অ্যাটাকে যাওয়া জেমির এই কৌশলকে সাধুবাদ জানাই। গোছানো ফুটবল খেলেও একটি গোল হজম করেছে বাংলাদেশ।
তার মানে এই নয় যে, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের কৌশলের কাছে তারা মার খেয়ে এক পয়েন্ট হারিয়েছে। বাছাইপর্বে সামনে আরও ম্যাচ রয়েছে। বাংলাদেশ যদি আরও কিছু পয়েন্ট ছিনিয়ে নিতে পারে, পয়েন্ট পেতে পারে, তাহলে এদেশের ফুটবলে নতুন যুগের সূচনা হতে পারে। সেই সঙ্গে এটাও বুঝতে হবে, এই উচ্ছ্বাস যেন এমন পর্যায়ে না যায়, যাতে ফুটবলাররা আত্মতুষ্টিতে ভোগে। তাহলে আবার সব শেষ হয়ে যাবে।
শফিকুল ইসলাম মানিক (জাতীয় দলের সাবেক কোচ): অনিন্দ্যসুন্দর একটি ম্যাচ। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের একটি ম্যাচ। আফগানিস্তান, কাতার, ভারত- সব ম্যাচেই অসাধারণ খেলেছে বাংলাদেশ। আগে ধারাবাহিকতার অভাব ছিল আমাদের। এই বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সেই ঘাটতি পুষিয়ে যাচ্ছে। জামাল ভূঁইয়াদের পারফরম্যান্স চোখে পড়ার মতো। আফগানিস্তানের কাছে ১-০ গোলে হেরেছে। কাতারের সঙ্গে ১-০ গোলেই পিছিয়ে ছিল। শেষ মুহূর্তে আরেকটি গোল হজম করে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে এক গোলে এগিয়ে ছিলাম আমরা। শেষ মুহূর্তে গোল হজম করতে হয়েছে। ভারত র্যাংকিংয়ে আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। অনেক অর্থ খরচও করে। সেই ভারতের মাঠে স্বাগতিকদের সঙ্গে অবশ্যই দুর্দান্ত লড়াই করেছে বাংলাদেশ। সন্তুষ্ট হওয়ার মতোই খেলা।
এই ড্র জয়ের সমতুল্যই। তবে কিছু সমস্যা দেখে গেছে। শেষ দিকে একজন ডিফেন্ডার বাড়ানো যেত। ইয়াসিন আনমার্ক হয়ে গিয়েছিল। সেখানে একজন লম্বা খেলোয়াড় থাকলে ঠিক হতো। জেমির অধীনে ভালো করছে বাংলাদেশ। ফুটবলারদের শরীরী ভাষাও ভালো ছিল। যে কারণে ফল এসেছে। পেনাল্টি পেতে পারত জামালরা। কিন্তু রেফারি দেননি। রেফারির এসব ভুলের মাশুল দিতে হয় দলকে। তবে সব মিলিয়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের মাধ্যমে দল ভালো করছে- এটাই আশার দিক বলে আমি মনে করি।
মারুফুল হক (জাতীয় দলের সাবেক কোচ): বাংলাদেশ খুব ভালো খেলেছে। রক্ষণভাগে বেশ কিছু ব্লক তৈরি করেছিল। জেমি যে কৌশল তৈরি করেছেন তা ঠিক ছিল। কাতারের সঙ্গেও কাউন্টার অ্যাটাকে খেলেছিল বাংলাদেশ। নাবীব নেওয়াজ জীবনের অ্যাটাকগুলোও খুব ভালো ছিল। সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে হয়তো ২-০ গোলে এগিয়ে যেতে পারতাম। পরে এক গোল হজম করলেও জয়বঞ্চিত হতাম না। অ্যান্ড্রু অর্ড তরুণ ফুটবলারদের খুঁজে এনেছেন। জেমি ১৫ মাস ধরে এই ফুটবলারদের ঘষামাজা করছেন। এই তরুণরা ৯০ মিনিট খেলতে পারে। তারা কিছু করতে চাচ্ছে।
ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব (সাবেক তারকা ফুটবলার): ভারতের বিপক্ষে অসাধারণ খেলেছে বাংলাদেশ। রক্ষণভাগ ভালো করেছে। কাউন্টার অ্যাটাকে গোল করেছে। আরও ঠাণ্ডা মাথায় খেললে জিততেও পারত বাংলাদেশ। খুব ভালো খেলেছে। এই দলে আরও কিছু তরুণ ফুটবলার আনতে হবে। সঙ্গে জেমি ডে’কে দীর্ঘমেয়াদে রাখতে হবে।
বিপ্লব ভট্টাচার্য (সাবেক তারকা ফুটবলার): অনেক ভালো খেলেছে বাংলাদেশ। এটা জেতা ম্যাচ ছিল আমাদের। এখন ফুটবলারদের ফিটনেস বেড়েছে। ম্যাচের ৯০ মিনিটই আমরা প্রাধান্য বিস্তার করে খেলতে পারি। বাংলাদেশ দলের একটি মান তৈরি হয়েছে। নাবীব নেওয়াজ জীবন দুটি গোলের সুযোগ নষ্ট করেছে। নইলে আমরা জিততে পারতাম।