অর্থনীতি

ডিমওয়ালা ইলিশে বাজার সরগরম, ডিম ছাড়ার প্রকৃত সময় নিয়ে দ্বিধা

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারগুলোতে ইলিশের বাজার সরগরম। মূলত নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর সাগর ও নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। কিন্তু যেসব মাছ এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে, তার বেশির ভাগ ইলিশের পেট ডিমে ভরা। এই ইলিশ যদি এখন ধরা না পড়তো, তাহলে আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে বেশির ভাগ ইলিশ ডিম ছাড়তো বলে বিক্রেতারা জানান। তাই বিক্রেতাসহ অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন ইলিশের ডিম ছাড়ার প্রকৃত সময় কখন?

সাধারণত প্রতিবছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে ও পরে ১৫ দিন সরকারের পক্ষ থেকে ইলিশের ডিম ছাড়ার প্রকৃত সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এ সময় নদীতে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকে।

তবে ইলিশ অধ্যুষিত নদীগুলোতে নির্ধারিত এ সময়ের পরেও প্রচুর ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়ে। এজন্য সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ইলিশের ডিম ছাড়ার সময়কে আরও সাত দিন বাড়িয়ে মোট ২২ দিন ডিম ছাড়ার সময় নির্ধারণ করেছে। ইলিশ অধ্যুষিত নদীগুলোয় এই ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এবার এই সময়ের আগেই ঝাঁকে ঝাঁকে ডিমওয়ালা ইলিশ  জালে ধরা পড়ায় ইলিশের ডিম ছাড়ার প্রকৃত সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মৎস্য মন্ত্রণালয় আশ্বিনের দ্বিতীয় পক্ষ ও কার্তিকের প্রথম পক্ষ এই ২২ দিন দেশের সব নদ-নদীতে ইলিশ মাছ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ইলিশের ডিম ছাড়ার সময় হচ্ছে আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমা। এই সময় ডিম ছাড়ার জন্য পরিণত ইলিশ সাগর থেকে মিঠাপানির নদীতে আসে। এই সময়টিকে নির্বিঘ্ন করতেই সরকার ওই সময় সব ধরনের মাছ শিকারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তারিখের হেরফের হয়। এজন্য এ সময় সাত দিন থাকলেও পরে তা ১৪ দিন এবং বর্তমানে তা  ২২ দিন করা হয়েছে।

ইলিশের জন্য আগে মোট পাঁচটি অভয়াশ্রম থাকলেও বর্তমানে বরিশালের আশপাশের ৮২ কিলোমিটার নদীপথকে নিয়ে নতুন অভায়শ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। এই ছয়টি অভয়াশ্রম হচ্ছে- চাঁদপুরের ষাটনল থেকে চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনার ১০০ কিলোমিটার, পটুয়াখালীর  কলাপাড়ায় আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটারভোলার ভেদুরিয়া থেকে চররুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার, শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ পর্যন্ত পদ্মার ২০  কিলোমিটার, চর ইলিশার মদনপুর থেকে ভোলার চরপিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার এবং বরিশাল সদরের কালাবদর নদীর হবিনগর পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জের বামনীরচর পয়েন্ট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার, মেহেন্দীগঞ্জের গজারিয়া নদীর হাটপয়েন্ট থেকে হিজলা লঞ্চঘাট পর্যন্ত  ৩০ কিলোমিটার এবং হিজলার মেঘনার মৌলভীরহাট পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জ সংলগ্ন মেঘনার দক্ষিণ-পশ্চিম জাঙ্গালিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার। এছাড়া আড়িয়াল খাঁ, নয়নভাংগুলি ও কীর্তনখোলা নদীর আংশিকও এই অভয়াশ্রমটির অন্তর্ভুক্ত।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু জানান, ইলিশ জাতীয়  সম্পদ। সরকার ইলিশ রক্ষায় ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলেই বাজারে এখন ইলিশের ছাড়াছড়ি। সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলেই ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে।

তিনি আরও জানান, এক সময় এক কেজি ওজনের ইলিশ ছিল স্বপ্ন। কিন্তু এখন বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ কোনো ব্যাপারই না। এছাড়া ইলিশের ডিম ছাড়ার সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে এবং জাটকা বড় হওয়ার সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ইলিশ সঠিক  সময় ডিম ছাড়তে পারছে, আমরা সেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছি। একই সঙ্গে জাটকা সংরক্ষণের বিষয়টিও নিশ্চিত করেছি।

তবে নির্ধারিত সময়ের পরেও জেলেদের জালে ডিমওয়ালা কিছু ইলিশ ধরা পড়ার বিষয়টি খুবই স্বভাবিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে শতভাগ সফল বা ব্যর্থ হওয়ার বিষয় নয়। বিশাল সাগর শতশত কিলোমিটার দীর্ঘ নদীতে নির্ধারিত সময়ের পরে কোনও ডিমওয়ালা ইলিশ থাকবে না এমনটি কল্পনা করাটাই তো বোকামি। আমরা চাই বেশিরভাগ ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পাক। আর আমাদের দেশে ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়ুক।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button