অর্থনীতি

বৈধ পথে সোনা আমদানিতে সাড়া কম

বৈধ পথে সোনা আমদানির ডিলারশিপের লাইসেন্স নিতে ব্যবসায়ীদের তেমন সাড়া নেই। গত ছয় মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকে এসংক্রান্ত আবেদন জমা পড়েছে মাত্র সাতটি। অথচ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর আবেদন জমা দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আবেদন না পড়লে সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। জানা গেছে, মুনাফা কমার আশঙ্কা, এনবিআরের করজাল এড়ানো এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ভয়ে বৈধ পথে সোনা আমদানির লাইসেন্স নিতে কম আগ্রহ দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তবে সোনা ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, লাইসেন্স পেতে অনেক ধরনের শর্ত জুড়ে দেওয়ায় বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর পক্ষে তা পুরোপুরি মেনে আবেদন করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৈধ পথে সোনা আমদানিতে ব্যবসায়ীদের কর-ভ্যাট দিতে হবে। বিক্রয় ও মজুদ সোনার তথ্য তাঁদের নির্দিষ্ট সময় পর পর প্রকাশ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর থেকে নিয়মিত পরিদর্শন করা হবে। ফলে করজাল এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির বিষয় এখানে মুখ্য। কিন্তু বিকল্প চোরাই পথে সোনা কিনলে কর-ভ্যাট নেই। আবার তুলনামূলক কম টাকায় সোনা কেনা যায়। ফলে মুনাফা করারও সুযোগ থাকে বেশি।

জানা যায়, দেশে চার থেকে পাঁচ হাজার ব্যবসায়ী সোনা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সদস্যসংখ্যা প্রায় ৭০০। আর বাংলাদেশ জুয়েলারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমইএ) সদস্য ২০০-এর মতো, কিন্তু সোনা আমদানির লাইসেন্সের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে গত ছয় মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে মাত্র সাতটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আবেদন জমা দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে চারটির নাম জানা গেছে। এগুলো হলো ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, জড়োয়া হাউস ও বাংলা গোল্ড, রত্না জুয়েলার্স।

গত ছয় মাসে কম আবেদন জমা হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, লাইসেন্স নেওয়ার আবেদনে যেসব শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সবার পক্ষে ফুলফিল করা সম্ভব নয়। বিশেষভাবে ছোট ব্যবসায়ীরা এটা করতে পারবে না। আবার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ভয়ও আছে। তিনি আরো বলেন, যারা আবেদন করেছে, তাদেরটাই দিতে বিলম্ব করা হচ্ছে। যেমন : ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড প্রায় এক মাস আগে আবেদন করেছে, কিন্তু এটা এখনো নিষ্পত্তি করা হয়নি। অথচ স্বর্ণ নীতিমালায় বলা আছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কোনো আবেদন জমা হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এটা নিষ্পত্তি করতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জুয়েলারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, যাঁরা সোনার ব্যবসা করছেন, তাঁদের সবার সক্ষমতা এক নয়। ফলে অনেকের পক্ষে আবেদন করাও সম্ভব হবে না। কারণ আবেদনপত্রের সঙ্গে অনেক ধরনের কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। আছে বড় ধরনের ফিন্যান্সের বিষয়। এ ছাড়া শুরুর দিকে হয়তো অনেকে এই সুযোগ নিতে চাইবেন না। তাঁরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করে পরবর্তী সময়ে এই সুযোগ নেবেন। তাঁর মতে, বৈধ পথে সোনা আমদানির সুযোগ সৃষ্টি হলে এ খাতে যে অনিয়ম ছিল, সেটা আস্তে আস্তে শৃঙ্খলার মধ্যে চলে আসবে।

দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে বার্ষিক ১৫ থেকে ২০ মেট্রিক টন সোনার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বৈধ আমদানির সুযোগ না থাকায় এর বেশির ভাগ পূরণ হচ্ছে চোরাচালানের মাধ্যম আসা সোনা দিয়েই। এতে প্রতিবছর বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এই প্রেক্ষাপটে গত বছরের অক্টোবরে স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। ওই নীতিমালার আওতায় সোনা আমদানির ডিলারশিপের লাইসেন্স দিতে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চলতি বছরের ১৯ মার্চ থেকে আবেদনপত্র বিতরণ শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকের ক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সঙ্গে দিতে হবে অনুমোদিত ডিলারের লাইসেন্সের কপি, ব্যাংক লাইসেন্সের কপি, স্বর্ণ ক্রয়, সংরক্ষণ ও বিতরণ আদেশ-১৯৮৭-এর আওতায় লাইসেন্সের কপি, অফিসের মালিকানা বা ভাড়ার চুক্তিনামার কপি, আবেদনকারী অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞ জনবল, নিরাপত্তাব্যবস্থা, যোগাযোগ, তথ-প্রযুক্তি ব্যবহারসংক্রান্ত বিবরণীর উপযুক্ত প্রমাণাদি। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের আবেদনের সঙ্গে হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্সের কপি, কর শনাক্তকরণ নম্বরের (টিআইএন) সনদপত্র, মূসক নিবন্ধন, ব্যবসা শনাক্তকরণ নম্বরের (বিআইএন) সনদপত্র, স্বর্ণ ক্রয়, সংরক্ষণ ও বিতরণ আদেশ ১৯৮৭-এর আওতায় লাইসেন্সের কপি, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য পদের কপি, আয়কর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের সার্টিফিকেট-আয়কর নির্ধারণী আদেশের কপি জমা দিতে হবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button